কাজিরবাজার ডেস্ক :
জিয়ার আদর্শে বিএনপি চলছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ জুন) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ৪০ বছর পরে আমরা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করছি। প্রয়োজনটা কেন? প্রয়োজন হলো এজন্য যে, এই মানুষটাকে বারবারই স্মরণ করতে হবে। তার যে কথা আমরা বলি, তিনি আমাদের নেতা, তিনি আমাদের আদর্শ, তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু সেই পথটায় আমরা এখন চলছি না।
এই পৃথিবী এখন একটি নষ্ট পৃথিবী দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই পৃথিবীতে এখন কোনো আদর্শ নেই, কোনো রকমের সততা নেই, কোনো মূল্যবোধ নেই। সময়টাকে এজন্য নষ্ট সময় বলা হয়। এখন যারা রাষ্ট্রপ্রধান হন, বেশিরভাগই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। এটা শুধু আমাদের দেশে না, সব দেশে। সেজন্য আমরা বলি গণতান্ত্রীক দেশে যদি পরিবর্তন আসে সেই পরিবর্তনের মধ্যেও চেষ্টা করে কীভাবে টিকে থাকবে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা আমেরিকা, সেখানে কিছুদিন আগে দেখলেন নির্বাচন হলো, ট্রাম্প কি চেষ্টাটাই না করলেন টিকে থাকার জন্য। যত রকম চেষ্টা আছে, নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে, একদম শেষে ক্যাপিটল হাউসে মানুষ ঢুকিয়ে দিল। শত শত হাজার হাজার মানুষ, যা আমেরিকার ইতিহাসে নেই। আসলে এখন আর নীতিকথা বলে কিছু নেই। রাজনীতিতে নীতিকথা নির্বাসিত হয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে বলেন ওল্ড হ্যাগান্স। ওল্ড হ্যাগান্স দিয়ে আর হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওল্ড হ্যাগান্সগুলো যা করেছে, নিউ হ্যাগান্সদের তো সে পথেই দেখতে পাই না। ওল্ড হ্যাগান্সরা ছাত্রজীবনে লড়াই করেছে, যৌবনে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, প্রাণ দিয়ে একটা দেশ স্বাধীন তো করে দিয়েছে।
অনেকে বলেন আন্দোলন দেন, আন্দোলন দেন; আন্দোলন দেইনি কোন দিন? আমরা তো প্রতি মুহূর্তেই আন্দোলন করছি। যেদিন আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে সেদিন থেকেই আমরা আন্দোলন করছি। একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আপনারা অনেক কথা শুনেছেন, পত্র-পত্রিকায়। আমরা কিন্তু স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তরুণ-যুবকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি জানতে চাই, আমাদের তরুণরা-যুবকেরা যারা সবসময় আন্দোলনের কথা বলেন, তারা কোন দিন নিজেরা একটা আন্দোলন শুরু করেছেন? তাদের সমস্যা নিয়ে। আমি দেখিনি।
পাশে বসা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালামসহ নেতাদের দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এদের তো কেউ বলে দেয়নি যে, তোমরা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু করো। তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাই নেমেছেন। এটা কিন্তু আন্দোলনের কেমিস্ট্রি। আপনাদের নিজেদেরই শুরু করতে হবে।
ঢাকায় বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না, ঢাকায় আন্দোলন হয় না এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রায়ই বলে, সব জায়গায় বলে। হয়তো কথাটা সত্যি তারা আন্দোলন করতে পারে না। কেন পারে না, অনেকগুলো কারণ আছে। কিন্তু ঢাকার বিএনপি কিংবা ঢাকার লোকেরা কবে আন্দোলন করেছে? বলতে পারবেন? আন্দোলন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, আন্দোলন শুরু হয় ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, তখন সবাই নেমে পড়ে। ঠিক কিনা বলেন। কবে বিএনপির ওয়ার্ডের নেতা, থানার নেতা আন্দোলন করেছে? হ্যাঁ, আন্দোলন হয় শেষের দিকে। শুরু করতে হলে, তরুণদের, যুবকদের আগে নামতে হবে। এটাই বিজ্ঞান, এটাই ক্যামিস্ট্রি। গতকালও বলেছি, বারবার বলতে চাই, নাউ দিস ইজ দেয়ার টাইম। জেগে উঠতে হবে, মানুষকে জাগাতে হবে। এটা আজকের কথা না, নজরুল ইসলামের কথা, রবি ঠাকুরের কথা। নজরুলের অনেক কবিতার মধ্যে আছে, কই সেই সমস্ত যুবকেরা কই? বেরিয়ে আসো।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনসী বজলুল বাসিত আনজুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ।