তথ্য-প্রযুক্তিতে দেশ এ খাতে অনেক এগিয়ে গেছে। করোনাকালে অনলাইনভিত্তিক কর্মকা- বেড়েছে। শিক্ষাঙ্গন থেকে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনলাইনের ব্যবহার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অনলাইনকেন্দ্রিক অর্থনীতি বিকশিত হতে শুরু করেছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের জন্য সহজলভ্য হচ্ছে। একইভাবে তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে। অধিক হারে নিরীহ মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের মধ্যে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। এসব অপরাধের পরিধি বাড়ছে। সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়া এবং ওই ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সূত্র ধরে নারী পাচারের একটি বড় চক্রের খোঁজ পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। টিকটকের মডেল করার টোপ দিয়ে অনেক তরুণীকে বিভিন্ন সময় ভারতে নিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই চক্রের ফাঁদে পড়া দুই তরুণী পালিয়ে দেশে এসেছেন বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থী নতুন করে ঝুঁকে পড়েছে মাদকের কারবারে। এই সুযোগে ইয়াবার সঙ্গে অতিমাত্রার ক্ষতিকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ও লাইসার্জিক এসিড ডাইইথালামাইড বা এলএসডি বিক্রি শুরু করেছে চক্র। অনেকেই ডার্কনেট বা গোপন অনলাইন যোগাযোগে মাদকের কারবার করছে। ধনী পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণরা ডার্কনেট অর্ডার করে পার্সেলে মাদক আনছেন। ফেসবুক গ্রুপেও প্রকাশ্যে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন ও বিক্রির প্রচার চালানো হয় বলে খবরে প্রকাশ।
দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমনে সরকার নানা ধরনের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগও নিয়েছে। কার্যক্রম শুরু করেছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে গঠন করা হয়েছে সাইবার ইউনিট। ডিজিটাল আইন, সাইবার অপরাধ দমনে নানা ধরনের উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও সাইবার অপরাধ বাড়ছে কেন, তা ভেবে দেখতে হবে।
আমরা মনে করি, শুধু আইন করে বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বসে থাকলে চলবে না, আইনের কঠোর প্রয়োগও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।