পবিত্র রমজানে দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর আনন্দের বার্তা নিয়ে এলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম এই ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র-নির্বিশেষে সবাই শরিক হয় এই আনন্দ উৎসবে। যে যার সাধ্যমতো এই দিনটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকে। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ভুলে মানুষে মানুষে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পথের বিড়ম্বনা অগ্রাহ্য করে সবাই ছুটে যায় পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের কাছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনাভাইরাস নামের মহামারি এবারের ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত নিষেধ। আর সেই কারণে শুধু আনন্দ নয়, রোগ প্রতিরোধের নতুন শপথও করতে হবে এবারের ঈদে।
দেশব্যাপী লকডাউন দেওয়া হলেও প্রায় কেউই তা মানছে না। ঈদের আগে দোকান, শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত দেওয়া হলেও তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। মার্কেট, শপিং মলগুলোতে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, অনেকে মুখে মাস্কও পরছে না। এর মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদে বাড়ি ফেরা। দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে; এমনকি ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন করেও বাড়ি ফেরা যাত্রীদের আটকানো যাচ্ছে না। তারা ফেরিঘাটের আশপাশের এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌযানে নদী পার হয়ে নানা ধরনের যানবাহনে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছে। এসব কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ঈদের পরপরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হতে পারে। অন্যদিকে মহামারির ধাক্কা আমাদের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের আঘাত করেছে। মহামারির কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া মানুষের মধ্যে অনেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ এখনো দরিদ্রই থেকে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বেড়েছে।
ঈদুল ফিতর একাধারে আনন্দ-উৎসব ও ইবাদত। এই আনন্দ আল্লাহর অশেষ রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এই আনন্দে নেই কোনো পাপ-পঙ্কিলতা। এ আনন্দে রয়েছে শুধুই সওয়াব ও পুণ্য। ঈদ মুসলমানদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্ব শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষও। এই উৎসবের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের আরো কাছাকাছি আসে। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের মানুষের সঙ্গেও আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। পবিত্র রমজান আমাদের চিত্তশুদ্ধির যে শিক্ষা দিয়েছে, ঈদুল ফিতর হচ্ছে সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর দিন।
করোনা সংকটেও সবার ঘরে পৌঁছে যাক ঈদের সওগাত। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে আমাদের ঘরে ঘরে ফিরে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।