চুক্তির টিকা দিতে হবে

7

বাংলাদেশ সরকারের মধ্যস্থতায় বেক্সিমকো ফার্মা এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ও তদনুযায়ী অগ্রিম টাকা পরিশোধ সত্ত্বেও যথাসময়ে টিকা প্রাপ্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান নির্বাহীর বরাতে জানা যায়, সম্প্রতি সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে প্রেরণের জন্য ৫০ লাখ ডোজ টিকা প্রস্তুত রেখেছে রফতানির জন্য। কিন্তু ভারত সরকার সেদেশেই করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আপাতত টিকা রফতানির ওপর আরোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে যথাসময়ে বাংলাদেশে টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি। অন্যদিকে দেশে টিকার মজুদ ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। ফলে প্রথম ডোজ প্রাপ্ত সবার জন্য এই মুহূর্তে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ভারত সরকার অবশ্য বলেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে তারা চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করতে প্রস্তুত। এমনকি বাংলাদেশে যৌথভাবে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটি। তবু এই মুহূর্তে সেরাম ইনস্টিটিউটের ক্রয়কৃত টিকা পেতে ভারত সরকারের ওপর সর্বোচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। ভারত সরকার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে বলেই প্রত্যাশা এবং বাংলাদেশ যাতে প্রতিশ্রুত টিকা পায় সে ব্যবস্থা করবে নিশ্চয়ই।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে যে, দেশে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ চলছে একই সময়ে। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে। টিকা পাওয়া গেছে ১ কোটি ২০ লাখ ডোজ। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া। নিবন্ধনকৃতদের প্রথম ডোজও চলছে। মে’র শুরুতে আরও টিকা আসতে পারে। অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি। সুতরাং অর্থের কোন অভাব হবে না। কিন্তু এখন টিকা পাওয়া যাচ্ছে না সময়মতো।
দেশবাসীকে নতুন বছরের শুরুতেই সুসংবাদ দিয়েছে সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা আমদানির জন্য চুক্তি করেছে। এ বাবদ পাঁচ শ’ কোটি টাকার বেশি অগ্রিম জমাও দেয়া হয়েছে ব্যাংকে। বিনিময়ে সেরাম ইনস্টিটিউটও দিয়েছে ব্যাংক গ্যারান্টি। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনার টিকা বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন, যেটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত টিকা মূলত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি এ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ গবেষণার ফসল। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশও এই টিকা পেয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, যা সরকার দিয়েছে বিনামূল্যে। কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে এই টিকা এনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।