পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত ॥ ১৪ দিন সীমান্ত বন্ধ, ভারতে ভয়াবহ রূপে করোনা

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার থেকে আগামী ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখা হবে। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে আকাশ পথে চলাচল বন্ধ রয়েছে। রবিবারের এ সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সঙ্গে স্থলপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, ‘মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের ভারতের সীমান্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এটা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে জরুরী পণ্য পরিবহন সচল থাকবে।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পথে চলাচল বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বহু মানুষ প্রতিনিয়ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করেন। হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নিলে তারা বেকায়দায় পড়বেন বলে গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। রবিবার এ বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়মও মানা হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমান্ত বন্ধ রাখা ছাড়া এখন পথ খোলা নেই।’
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে সামস সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৪ দিন কেউই দেশে ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘তবে সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এছাড়া যেসব বাংলাদেশীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট ও কলকাতা মিশনের ছাড়পত্র সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওইসব বাংলাদেশীর দেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।’
রবিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের জরুরী বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কোন মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না, আবার কেউ আসতেও পারছেন না। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত কার্যত যেভাবে চালু থাকে সেভাবে চালু নেই। তবে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহন চালু আছে বলে ওই বৈঠকে মন্ত্রী জানান। এর আগে রবিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোঃ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতে করোনার নতুন রূপ শনাক্ত হওয়ায় দেশটির সঙ্গে জরুরী পণ্য পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে শনিবারই পরামর্শ দিয়েছিল দেশে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কমিটি। কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। ভারতসহ অন্য দেশ থেকে যারা আসছে যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদের দেশে এ ধরনের সংক্রমণ প্রবেশ করবে না।’
এদিকে আগামী দুই সপ্তাহ সীমান্ত বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়বেন ভারতে অবস্থান করা বাংলাদেশীরা। বর্তমানে দেশটিতে দু’হাজারের মতো বাংলাদেশী অবস্থান করছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, এরমধ্যে প্রায় ১৫শ’ রোগী এবং ৫শ’র বেশি ব্যবসায়ী আছেন। যারা মূলত ঈদের বাজারের কারণে ভারতে আছেন। এ বিষয়ে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ডেপুটি হাই-কমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ‘হ্যাঁ মোটামুাটি দু’হাজারের মতো বাংলাদেশী ভারতে অবস্থান করছেন। তবে এখনই সঠিকভাবে বলতে পারব না। কতজন রোগী, কতজন আদার্স। কারণ রবিবার, ভারতে ছুটির দিন। তবে যারা ভারতে আছেন তারা দু’সপ্তাহের জন্য ফিরতে পারবেন না।’ ‘ব্যতিক্রম যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ। তবে এমন কোন ব্যক্তি থাকলে তাদের এখানে (দূতাবাসে) যোগাযোগ করতে হবে। এখান থেকে একটি প্রশংসাপত্র দেয়া হবে, তাই নিয়ে দেশে ফিরতে হবে। ’
জানা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বেশি। গত বছর দেশে যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছিল তার চেয়ে এই দুই ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক। চলতি মাসের প্রথম থেকেই ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঢোকায় সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ভাঙতে থাকে রেকর্ডের পর রেকর্ড। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন প্রতিদিন বিশ্বরেকর্ড গড়ছে দেশটি। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ভারতে যে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে সেটি ৩শ’ গুণ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ ভারতের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সফর বাতিল করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত কয়েকদিনে ভারতের শ্মশানগুলোতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও মিলছে না মরদেহ পোড়ানোর সিরিয়াল। কখনও জ্বালানো হচ্ছে গণচিতা। আর এসব ছবি এখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাল। বাংলাদেশেও একই সময় থেকে সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়েছে। এর মধ্যে যেন ভারতের ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে দেশে প্রবেশ করে সংক্রমণ-মৃত্যু আরও না বাড়াতে পারে সেজন্য সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দুই হাজারের বেশি।