সিয়াম সাধনার মাস

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মুবারক মাহে রমজানের আজ নবম দিবস। সিয়ামের সঙ্গে সালাতের এক গভীর সম্পর্ক। দুটোকে আলাদা ভাবা যায় না। আহকামে ইলাহী, তথা ঐশ্বরিক বিধানের হিকমত ও প্রজ্ঞার সামনে আমাদের সকলকেই মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়া উচিত। এ অবিচল বিশ্বাস আমাদের থাকতে হবে যে, সালাত হলো বান্দার জন্য প্রেরিত আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ উপহার প্রধানতম ফরজ, দ্বীনের অন্যতম মূল স্তম্ভ নাজাত ও মুক্তির পূর্বশর্ত, ঈমানের অতন্দ্র প্রহরী। আলাহ তায়ালা বলেন : তোমরা সালাত কায়েম কর আর মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না। (সূরা রুম : ৩১)। সূরা আ’লার ১৪-১৫ আয়াতে এসেছে : সফল ব্যক্তি সেই, যে পবিত্রতা অর্জন করেছে। আপন প্রতিপালকের নাম স্মরণে অতঃপর সালাতে মগ্ন থেকেছে।
প্রত্যেক সালাতের জন্যই আল্লাহ পাক সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর সময়সহ ফরজ করা হয়েছে।’ (সূরা নিসা : ১০৩)। অতএব নির্ধারিত সময় মতোই আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। সালাতের সময়সমূহের প্রতি ইঙ্গিত করে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাত আঁধার হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করুন, আর ভোরের সালাতও। নিশ্চয় ফজরের সালাত (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময় (সূরা বণী ইসরাঈল : ৭৮)। সূরা ত্ব-হা’র ১৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে : আপন প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাসবিহ পাঠরত থাকুন সূর্যাদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং দিনের শুরু ও রাতের শেষে তাসবিহ পাঠ করুন যেন আপনি সুখী হন।
সময়ের অল্প অল্প ব্যবধানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করার পেছনে নিহীত রয়েছে আল্লাহ তায়ালার বিরাট হিকমত। সালাতের এই বারংবারতা ও প্রাত্যহিকতার মাধ্যমে মানুষ তার আত্মা ও রুহের জন্য লাভ করে পরিপূর্ণ ও পুষ্টিকর খাদ্য। তদ্রƒপ এতে রয়েছে কলবকে সৃষ্টিবিমুখ ও স্রষ্টামুখী করে পার্থিব লোভ লালসা এবং শয়তানের চতুর্মুখী প্ররোচনা থেকে হিফাজতের পরিপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে হযরত শাহ ওয়ালীউলাহ মুহাদ্দীস দেহলবী (রহ.) বড় সুন্দর লিখেছেন : মুসলিম উম্মাহ যদি প্রতিদিন বারবার জীবন ও কর্মের হাসাবা ও কর্মের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত না রাখে, তবে এই উম্মাহর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো কিছুতেই সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিধান প্রদানের মাধ্যমে মহা-প্রজ্ঞাবান আল্লাহ পাক সে ব্যবস্থাই করেছেন। পূর্ব থেকেই নামাজের অপেক্ষা ও প্রস্তুতি গ্রহণ মূলত : সালাতেরই অন্তর্গত এক সালাতের জ্যোতির্ময়তারই একটা অংশ। এভাবে দিনের অধিকাংশ সময় সালাতের গ-িতে এসে পড়ে।
আমাদের এ অভিজ্ঞতা আছে, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ত করে শয্যা গ্রহণ করে সে অন্ততপক্ষে পশুর মতো নিশ্চিন্তে কিছুতেই ঘুমোতে পারবে না। তদ্রƒপ কর অন্তর যদি সর্বদা সালাত ও অন্যান্য জিকির ইবাদতের চিন্তায় মগ্ন থাকে তবে তার ভেতরের পশুত্ব কিছুতেই তাকে কোন পাশবিক কর্মে লিপ্ত করতে সফল হবে না। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে : ঘুম থেকে জাগ্রত হতে হতে যার মুখে কালিমা শাহাদাত, তাসবিহ ও তাহমিদ তথা পবিত্রতা ও প্রশংসাবাদ উচ্চারিত হয় সে যদি কোন দুআ করে কিংবা অজু করে সালাত আদায় করে তবে তার দুআ ও সালাত অবশ্যই কবুল হবে।’ (হাদীসটি তিরমিযী ও আবু দাউদেও উদ্ধৃতি হয়েছে)।
হযরত শাহ ওয়ালীউলাহ (রহ.) ওপরে বর্ণিত এই মর্ম উদ্ধার করেছেন যে, যার মুখে আল্লাহর জিকির এতই স্বতঃস্ফূর্ত এবং অন্তরে সালাতের চিন্তা এতই প্রবল যে চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে জিকির শুরু হয়ে যায় সে কিছুতেই গাফিল ও অচৈতন্য অবস্থায় ঘুমোতে পারবে না।- (হুজ্জাতুলাহি’ল বালিগাহ, খ ১, পৃ:৭৮)।
আল্লাহ পাক মুমিনদের সম্বন্ধে বলেছেন : এরা এমন লোক যাদেরকে ব্যবসা ও ক্রয়-বিক্রয় কিছুই আল্লাহর জিকির থেকে গাফিল করতে পারে না। (সূরা নূর : ৩৭)।
অতএব নির্ধারিত সময়ে আমাদের সালাত আদায় করতে হবে। সময় মতো সালাতের রাকাত সংখ্যা ও আল্লাহ পাক নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা অবশ্যই পালনীয়। কোন অজুহাতেই এর অন্যথা হতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (স.) ও তাঁর পুণ্যাত্মা সাহাবাগণ সালাতের সময় ও রাকাত সংখ্যা উভয়েরই যথাযথ পাবন্দী করেছেন জীবনভর।
বস্তুত পক্ষে এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারিত সময় ও রাকাত সংখ্যাসহ মানুষের রুহ ও আত্মার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষাকারী ইজেকশন স্বরূপ। আর স্বয়ং রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের জন্য মনোনীত করেছেন এ ব্যবস্থাপত্র, যিনি মহাজ্ঞানী ও অনন্ত প্রজ্ঞার অধিকারী। মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষের যাবতীয় দুর্বলতা সম্পর্কে যিনি মানুষের চেয়েও বেশি অবগত। তাই মানুষের উচিত স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর বিধান মেনে নেয়া এবং অবনত মস্তকে তাঁর নির্দেশ পালন করে যাওয়া।