কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা মহামারি পরিস্থিতির ভয়াবহতা ঠেকাতে জনস্থাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এবারও ঘরে বসে নববর্ষ উদযাপন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু সবার আগে মানুষের জীবন।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ১৪২৮ নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন তিনি।
করোনা মহামারি পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল আকার ধারণ করলে মানুষের চলাচলের উপর আমাদের কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হয়। আপনারা দেখেছেন, কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।
‘জনস্থাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমি জানি এর ফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের সবাইকেই মনে রাখতে হবে- মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারবো। ’
গত বছরের মতো এবারও ঘরে বসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, গত বছরের মতো এবছরও আমরা বাইরে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারছি না। কারণ করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারা দেশে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনা ভাইরাস আরও প্রাণঘাতী হয়ে আভির্ভূত হয়েছে।
‘পহেলা বৈশাখের আনন্দ তাই গত বছরের মতো এবারও ঘরে বসেই উপভোগ করবো আমরা। টেলিভিশন চ্যানেলসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সে সব অনুষ্ঠান উপভোগ ছাড়াও আমরা নিজেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে পারি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর করোনা ভাইরাস আঘাত হানার পর আমাদের নানাবিধ বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। এই মহামারি প্রতিরোধে যেহেতু মানুষের সঙ্গ-নিরোধ অন্যতম উপায়, সে জন্য আমাদের এমন কিছু পদক্ষেপ করতে হয়েছে। যার ফলে মানুষের জীবন-জীবিকার উপর প্রভাব পড়েছে।
‘গত বছর আমরা একটানা ৬২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ করেছিলাম। আমরা এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারিনি। বিদেশের সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের যেখানেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, সেখানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। ’
টিকা নেওয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টিকা দিলেই একজন সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবেন এমন নিশ্চয়তা নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কাজেই টিকা নেওয়ার পরও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমাদের সৌভাগ্য টিকা উৎপাদনের শুরুতেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকার ডোজ আমরা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
‘ইতোমধ্যেই ৫৬ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসবো। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে। ’
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকার চিকিৎসা সুবিধা বাড়াচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলায় করোনা ভাইরাস রোগীর চিকিৎসা সুবিধার আওতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান আইসিইউ সুবিধা আরও বাড়ানো হচ্ছে।
সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পাশাপাশি অবশ্যই মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আমাদের নিজের, পরিবারের সদস্যদের এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষা প্রদানের। কাজেই ভিড় এড়িয়ে চলুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘরে ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গরম পানির ভাপ নিন। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। আমরা যদি সবাই করোনা ভাইরাস মোকাবিলার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, অবশ্যই এই মহামারিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, যুগে যুগে মহামারি আসে, আসে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। এসব মোকাবিলা করেই মানবজাতিকে টিকে থাকতে হয়। জীবনের চলার পথ মসৃণ নয়। তবে পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের তা জয় করে এগিয়ে যেতে হবে।