বাংলাদেশ গ্রামনির্ভর কৃষি অর্থনীতির অপার সম্ভাবনায় তৈরি হওয়া নদীবিধৌত এক সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ অঞ্চল। সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাঞ্ছনীয়। এসব এলাকায় হতদরিদ্র কৃষকদের যাপিত জীবনও স্বাচ্ছন্দ্য এবং পরিবেশের অনুকূল হয় না। সঙ্গত কারণেই তারা জমিতে ফসল ফলাতে বেশ সঙ্কটেই পড়ে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজের অতি আবশ্যক একটি শ্রমপদ্ধতি। আমরা এখনও কৃষি কাজের উপযোগী যন্ত্রপাতির কিয়দংশ (২৫%) উৎপাদন করি মাত্র। বাকি ৭৫%ই বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভর। প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা রয়েছে দেশে। অপেক্ষাকৃত পলিমাটি ঘেঁষা উর্বর অঞ্চলগুলোর তুলনায় হাওড় ও উপকূলীয় স্থানসমূহে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় অনেক বেশি। উৎপাদিত কৃষিযন্ত্র বিদেশে রফতানি করার সম্ভাবনাও আছে। তবে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করতে যে খুচরা যন্ত্রের আবশ্যক হয় তা মূলত আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। সেখানে আমদানি শুল্কের পরিমাণও খুব একটা কম নয়। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, শুল্ক কমালে দেশের উৎপাদনও বেড়ে যাবে অনেক। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারও উন্মুক্ত হবে দেশীয় উৎপাদকদের কাছে। যার মূল প্রভাব বাড়বে কৃষি অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধিতে। কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্যের আধিক্যে সংশ্লিষ্ট অনেকেই চাষাবাদে বিজ্ঞানভিত্তিক উপকরণ জোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সেখানে সরকারের সীমাবদ্ধতাও আমলে নিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী ভর্তুকির সঙ্কট সংশ্লিষ্ট কৃষিজীবীদের বিপাকেও ফেলে দেয়। সাধারণ কৃষিজীবীদের ঋণ দিতেও প্রায়ই অনীহা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকাররা। ট্রাক্টরের মতো ভারি কৃষিযন্ত্রের মূল্য প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। কম্বাইন হারভেস্টারের দাম ২০ থেকে ৩৩ লাখ টাকা। প্রতিদিনের খেটে খাওয়া পরিশ্রমী কৃষকদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থও সেভাবে মজুদ থাকে না। কৃষির বৈজ্ঞানিক উপকরণের দামও কৃষকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কৃষি উপকরণের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ নিয়ে আসতে হয় বাইরে থেকে। যেখানে আমদানি শুল্ক ও কৃষকদের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে সঙ্কুলান হয় না। এখানেও ইতিবাচক ভূমিকার প্রয়োজন আছে সরকারের, মূলত কৃষি সরকারের। বাজারজাতকরণ ছাড়াও উৎপাদক শ্রেণীর দরকারি বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সরবরাহ করাও চাষাবাদের নির্ণায়ক শক্তি। কারণ, আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মান্ধাতার আমলের কৃষি সরঞ্জাম ছাড়াও প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতায় প্রচলিত উৎপাদন ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হওয়া আসলেই কঠিন। সুতরাং দুঃসময়ের সমস্ত বাধা বিঘœকে জোর কদমে অতিক্রম করা সময়ের যৌক্তিক দাবি। বিভিন্ন কৃষিজাতপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। সেখানে উৎপাদনে বিনিয়োজিত শিল্পের আধুনিকায়নে আরও নিরলস ও প্রাসঙ্গিক ভূমিকা বাঞ্ছনীয়। সরকারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানা, মালিক-শ্রমিকসহ কৃষিজীবী সম্প্রদায় একাত্ম হয়ে কৃষি অর্থনীতির মূল নিয়ামক শক্তিকে আরও মানসম্মত, অবারিত করতে যা যা করণীয় সবই করা বাঞ্ছনীয়।