সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা

16

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর দেশের গুরুদায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। নাগরিকের প্রাণের নিরাপত্তা এবং সম্পদ ও সম্পত্তির সুরক্ষায় তারা নিয়োজিত। সুতরাং এই বাহিনীর ওপর যারা জেনেবুঝে হামলা করে প্রকারান্তরে তারা দেশের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার জায়গাটিকেই বিপন্ন করতে চায়। একটি নির্দিষ্ট থানায় আক্রমণ সংঘটিত হলে ওই থানার শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ার প্রবল ঝুঁকি তৈরি হয়। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম এই কাজেই লিপ্ত হয়েছে। হেফাজতের বিক্ষোভকে ঘিরে তিন দিনের সহিংসতায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে এটিও যোগ করা জরুরী যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও তারা আঘাত করেছে। ইউএনও-এসিল্যান্ড বা মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। সরকার যত আইন-বিধিনিষেধ আরোপ করে, তা তাদের মাধ্যমেই প্রয়োগ হয়। সামান্য লকডাউন করতে গেলেই দেখা যায় ইউএনওর গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় বা যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়। এই কর্মকর্তারা কিন্তু সরকারের নির্দেশেই এসব করেন। তাই ইউএনও-এসিল্যান্ডদের নিরাপত্তার দরকার রয়েছে।
আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয় যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইউনিয়ন পর্যায়ে আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। স্মরণযোগ্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সরকারী বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা হয়। এরপর সরকার ইউএনওদের নিরাপত্তার জন্য ১০ জন করে আনসার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন বেশিরভাগ উপজেলায় ৪ থেকে ৬ জন করে আনসার দায়িত্ব পালন করছেন। অবশ্য সবার হাতে অস্ত্র নেই। আনসার সদস্যদের জন্য অস্ত্র বরাদ্দও বাড়ানো জরুরী হয়ে উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার নয়। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা হেফাজতের তা-বের চিত্র জাতীয় সংসদে তুলে ধরে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে গত ২৬-২৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এই তিন দিনে সরকারী হিসেবেই অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় সরকারী বিভিন্ন দফতরে হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, থানা, ফাঁড়ি, ভূমি কার্যালয়সহ ৩১টি সরকারী ও আধা সরকারী স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। দেরিতে হলেও এইসব জ্বালাও পোড়াওকারী হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। জাতি প্রত্যাশা করে, যে যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকলে তাকে আইনের আওতায় দ্রুত নিয়ে আসা চাই। বিষধর সাপের বিষদাঁত ভাঙতে দেরি হলে তা কেবল ক্ষতি বৃদ্ধিই ঘটাবে। ধর্মের দোহাই দিয়ে অধর্ম বিস্তারকারী বিষবৃক্ষ অবশ্যই উপড়ে ফেলা চাই।