“সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদের বড় অংশজুড়ে রয়েছে নদী। তাই এই প্রকৃতিকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। নদী তীরে সিলেট নগর গড়ে উঠেছিল। পৃথিবীর সকল সভ্যতাও গড়ে উঠেছে নদীতীরে। আজ নদীর সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই। দখল-দূষণের মাধ্যমে নদীকে আমরা প্রতিনিয়ত বিপন্ন করছি। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে নদীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে।”
রবিবার (১৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখা ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার-এর যৌথ উদ্যোগে সুরমা নদী তীরের চাঁদনীঘাটে আয়োজিত নদীতীরে নদীপ্রেমি সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সহ সভাপতি প্রফেসর ড. নাজিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নর্থ-ইষ্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল ষ্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস সোহেল, প্রত্নতত্ব সংগ্রাহক ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, সারী নদী বাঁচাও আন্দোলন-এর সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদি, ভূমিসন্তান বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, ইনোভেটর কো-অর্ডিনেটর প্রণব কান্তি দেব, নারী নেত্রী ইন্দ্রানী সেন, ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষিকা আফরাহিম আহমেদ এলিজা, প্রাণীরক্ষা বিষয়ক সংগঠন সোসাস-এর কো-অর্ডিনেটর ওয়াজি আহমেদ অমু, কিশোর সংগঠন আলোর পণ-এর নুসরাত ইলাহী, সমাজকর্মী বাবলু আল মামুন প্রমুখ।
নদীপ্রেমি সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস (ইন্টারন্যাশনাল ডে অব অ্যাকশন ফর রিভারস) নদীর প্রতি জবাবদিহি করার দিন। নদী আন্দোলনকারীদের আন্দোলন জোরদার করার শপথ নেয়ার দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, নদী আমাদের প্রতিনিয়ত দান করে চলেছে, সেই দানের প্রতিদান আমরা কীভাবে দিই, তার হিসাব-নিকাশ করতে হবে। বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস লিখতে হলে নদীর কথা লিখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে দেশের মানুষের অন্যতম শ্লোগান ছিল ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। আজ আমরা সেই ঠিকানা হারাতে বসেছি।
আব্দুল করিম কিম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলে কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশ থেকে নদীর প্রতি দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দেওয়া এ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানে একত্র হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তাইওয়ান, ব্রাজিল, চিলি, লেসোথো, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঐ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা ১৪ মার্চকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশে নদীকৃত্য দিবস উদযাপন শুরু হয় ২০০৬ সাল থেকে । সিলেটে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এই দিবস উদযাপন করে আসছে।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি এবারের আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি প্রয়াত সাংবাদিক, লেখক ও নদী সংগ্রামী সৈয়দ আবুল মকসুদকে উৎসর্গ করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাপা কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসাবে সিলেট তথা দেশের নদ-নদী রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন।