কাজিরবাজার ডেস্ক :
মোটরসাইকেলে পুলিশে কর্মরত কোনও ব্যক্তি সরকারি কাজে, ব্যক্তিগতভাবে কিংবা ছুটিতে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ভ্রমণ করতে পারবে না। এ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদরদফতর।
পুলিশ সদরদফতর সূত্র বলছে, সম্প্রতি পুলিশ সদস্যদের প্রায়ই সরকারি ও ব্যক্তিগত কাজে মোটরসাইকেলে করে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণ করতে দেখা যায়। এতে অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর আহত বা নিহত হচ্ছেন। মূলত এ কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা। কোনও পুলিশ সদস্য এই নির্দেশনা অমান্য করলে, তা মারাত্মক শৃঙ্খলাপরিপন্থী আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পুলিশ সদরদফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি কনফিডেন্সিয়াল আব্দুল্লাহীল বাকী স্বাক্ষরিত নির্দেশনা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সকল ইউনিট প্রধানদের জানানো হয়। এর তিন দিন আগে ২১ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে মোটরসাইকেল গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে এইচ এম রনি ওরফে হাদী রনি নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। একই ঘটনায় তার স্ত্রী আহত হন।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ফেব্রুয়ারিতে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ সদস্য ৮ জন, র্যাব সদস্য ১ জন নিহত হয়েছেন। সারাদেশে ১৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭১ জন।
সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি চরমভাবে বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় সবার বয়স ১৩ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন যুবক নিহত হয়েছে, ২ জন গুরুতর আহত। অর্থাৎ প্রতিটি মোটরসাইকেলে গড়ে ৩ জন করে আরোহী ছিল। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা ও ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ। এই প্রেক্ষাপটে সরকার মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমানো এবং সিসি (অশ্বশক্তি) সীমা উন্মুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে দুর্ঘটনা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটি বলছে, ফেব্রুয়ারিতে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০৬টি। নিহত ৫১৭ জন এবং আহত ৬৫৯ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭, শিশু ৬৮।
র্যাব পুলিশ ছাড়াও সাবেক এনএসআই কর্মকর্তা ১ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৮ জন, চিকিৎসক ৪ জন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি ১ জন, ইসলামি বক্তা ১ জন, উপজেলা কার্যালয়ের অফিস সহকারী ১ জন, আইনজীবী ২ জন, নাট্যকর্মী ১ জন, সাংবাদিক ৩ জন, ব্যাংক কর্মকর্তা ৫ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৬ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৭ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৪৩ জন,প্রবাসী ১ জন, পল্লীবিদ্যুতের লাইনম্যান ও সুপারভাইজার ২ জন, মোটর মেকানিক ৩ জন, পাটকল শ্রমিক নেতা ১ জন, পোশাক শ্রমিক ১১ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৫ জন, কৃষি শ্রমিক ৮ জন, রাজমিস্ত্রি ২ জন, ডিসিসি’র পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১ জন, পত্রিকার হকার ১ জন, চার লেন প্রকল্পের নিরাপত্তাকর্মী ১ জন, মানসিক প্রতিবন্ধি ৪ জন, ইউপি সদস্য ৩ জনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৯ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন এবং জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।