স্টাফ রিপোর্টার :
এবার করোনা ভাইরাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ঘরে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার হিন্দু সম্প্রদায়ের বিদ্যার অন্যতম দেবী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
শীতকালের পর বসন্ত ঋতুতে প্রথম যে উৎসব পালিত হয়, তা হল সরস্বতী পুজা। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এবার ফাল্গুন মাসের পঞ্চমী তিথিতে পালিত হবে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা। সরস্বতী পুজার এই বিশেষ দিনটি বসন্ত পঞ্চমী ছাড়াও শ্রী পঞ্চমী এবং সরস্বতী পঞ্চমী নামেও পরিচিত।
আজ মঙ্গলবার ১৬ ফেব্রুয়ারী সকাল ৬টা ৫৯ মিনিট থেকে শুরু হয়ে সরস্বতী পুজা বেলা ১২টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত। সরস্বতী পুজোর জন্য মোট ৫ ঘণ্টা ৩৭ মিনিটের সময় পাওয়া যাবে। সকালে স্নান সেরে সাদা বা হলুদ পোশাক পরে সরস্বতী পুজোর জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী হলেন জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বুদ্ধি ও বিদ্যার দেবী। বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তিনি হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী। হিন্দুরা বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা করে থাকেন।
এদিকে, এবার সরস্বতী পূজায় সিলেট মহানগর পুলিশ (এসমএমপি) মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া না দিতে মালিক সমিতিকে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশনার পর কোনো পূজা মণ্ডপে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া না দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাউন্ড সিস্টেম মালিক কল্যাণ সমিতি সিলেট। এমন সিদ্ধান্তে পূজার আয়োজকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
জানা যায়, রবিবার সিলেটের বিভিন্ন মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে মাইক ভাড়া না দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে এসএমপি।
এ চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের গণমাধ্যমের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ট্রাফিক) জোর্তিময় সরকার বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ীদের এরকম চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে পূজা মন্ডপে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করার কোনো সিদ্ধান্ত পুলিশ নেয়নি। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুলিশ চিঠি দিয়ে ব্যবসায়ীদের জানিয়েছে।
তবে সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, শোভাযাত্রায় সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। তবে পূজার দিনে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং পূজার দিন রাত ১০টা পর্যন্ত সীমিত আকারে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রজত বলেন, পুলিশের চিঠি পাওয়ার পর ব্যবসায়ীরা পূজায় মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া দিতে চাইছেন না। অনেক পূজা মণ্ডপ থেকে এরকমটি আমাকে জানানো হয়েছে। পূজার আয়োজকরা এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আমরা পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এবিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
এদিকে, পুলিশের চিঠি পেয়ে গতকাল সোমবার বৈঠকে বসে সিলেট মাইক এন্ড সাউন্ড সিস্টেম মালিক কল্যাণ সমিতি। সভায় পুলিশের নির্দেশনার কারণে সরস্বতী পূজার কোনো মণ্ডপে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নজিকুল ইসলাম রানা বলেন, হঠাৎ করে গতকাল পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া না দিতে বলা হয়েছে। পুলিশের এরকম নির্দেশনায় আমরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। এছাড়া অনেকের কাছ থেকে আমরা ভাড়া বাবদ অগ্রিম টাকাও নিয়েছি। এখন তাদের সাথে সম্পর্কও নষ্ট হবে। এনিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সাথে কথা বলা দরকার ছিলো।
রানা বলেন, পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করা আমাদের পক্ষ সম্ভব নয়। তাই আমরা পূজায় মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এদিকে, পুলিশের এমন নির্দেশনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটে সরস্বতী পূজার আয়োজকরা। নগরীর দাড়িয়াপাড়া এলাকায় পূজার আয়োজকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব কর্মকান্ডে মাইক সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার হচ্ছে। তাতে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু কেবল পূজোর বেলায় তাদের আপত্তি কেনো?