এইচএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থীরা

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এইচএসসি সমমানের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কাক্সিক্ষত ফল পাবেন কিনা বা কবে ফলাফল প্রকাশ করা হবে তা নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছেন। যদিও ইতোমধ্যে অটোপাসের ফল তৈরির গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এখন শিক্ষাবোর্ডগুলোকে ফল তৈরির কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হবে। ফলাফল প্রকাশে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি চাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন সেদিন এ ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ঈশিতা সাবরিন বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিলেও করোনার জন্য সরকার পরীক্ষা বাতিল করে সকলকে অটোপাস দিয়েছে। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। এ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার জেএসসি পরীক্ষা ভালো হলেও অসুস্থতার কারণে এসএসসি পরীক্ষা কিছুটা খারা হয়েছে। এ কারণে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ২ পয়েন্ট পেয়েছিলাম। আশা ছিল এইচএসসিতে ভালো করে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় স্বপ্ন পণ্ড হয়ে গেছে। এখন আমার যে রেজাল্ট আসবে তা দিয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবো কিনা সেই শঙ্কায় আছি। তার মতো এমন অনেক শিক্ষার্থী ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বলে জানান এই শিক্ষার্থী।
এদিকে গত সোমবার (২৫ জানুয়ারি) পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে সংসদে পাস হওয়া তিনটি সংশোধিত আইনের গেজেট জারি করা হয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তিনটি বিলে সম্মতি দেন। বিল তিনটিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর সেগুলো আইনে পরিণত হয়।
‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন-২০২১’, ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড (সংশোধন) আইন-২০২১’ ও ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (সংশোধন) আইন-২০২১’- এর গেজেট জারি করা হয়।
এখন যেকোনো দিন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। এসএসসি ও জেএসসির পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দিতে এ আইনগুলো পাস করা হয়।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) সংসদে বিল তিনটি পাসের পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিল পাসের পর প্রজ্ঞাপন দিতে দুদিন সময় লাগবে। এরপরই আমরা দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করব।’
আগের আইন অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার পর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সংশোধিত আইনে পরীক্ষা ছাড়াই বিশেষ পরিস্থিতিতে ফলাফল প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছে।
আইন তিনটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিমারি, মহামারির কারণে বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে কোনো অনিবার্য পরিস্থিতিতে কোনো পরীক্ষা প্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সনদ প্রদান করা সম্ভব না হলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দ্বারা কোনো বিশেষ বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করে উক্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং সনদ প্রদানের জন্য নির্দেশনা জারির বিষয় উল্লেখ রয়েছে।’
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ফরমেটে এইচএসসির ফলাফল তৈরির কাজ শেষ করেছি। বর্তমানে পরীক্ষা ছাড়া ফলাফল প্রকাশের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসে একটি সভা করে ফরমেট নির্বাচন করা হবে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ সভা করা হবে। এরপর তার ভিত্তিতে ফলাফল তৈরির কাজ শেষ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে চিঠি দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন, সেদিন ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এর আগে সব শিক্ষাবোর্ডকে ফলাফল তৈরির নির্দেশনা দেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সম্ভাব্য আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে চিঠি তৈরি করা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যেদিন নির্ধারণ করবেন সেদিন ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
এদিকে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১ এপ্রিল। কিন্তু করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।
জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুযায়ী ফলাফল তৈরির প্রায় সব কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে পরদিন ফলাফল প্রকাশ করা হবে। কিছু গাণিতিক হিসাব মোতাবেক একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে এ ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবার যেহেতু পরীক্ষার খাতা আনা বা তা মূল্যায়নের কাজ নেই, শুধু নির্ধারিত কিছু নম্বরের ওপর যোগ বিয়োগ করে ফলাফল প্রকাশ কর হবে। সেক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি অনেক কম হবে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগও কম থাকবে। তারপরও ফলাফল প্রকাশের পর পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ দেয়া হবে। কেউ চাইলে তার ফলাফল পুনরায় মূল্যায়ন করে দেখানো হবে। এ জন্য ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয়া হবে। আবেদন ফি দিয়ে টেলিটকের মাধ্যমে এ আবেদন করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ব্যাখ্যা তুলে ধরে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল পাঠিয়ে দেয়া হবে।’