করোনার সংহার মূর্তির চরম প্রকোপে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব পর্যুদস্ত। বিপন্ন ইউরোপ-আমেরিকা এখনও বহুল সংক্রমণ করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দিশেহারা। যদিও প্রতিষেধক ইতোমধ্যে অনেকে নিতে পেরেছে। তবে ফলের জন্য আরও অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। বহির্বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে এখন অবধি ছোঁয়াচে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চিত্র দৃশ্যমান। অর্থনীতির চাকাকে পুনরায় লকডাউনের পরপরই চালু করার নজির দেখায় বর্তমান সরকার। প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমও তার গতি ফিরে পেয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত বিপন্ন অবস্থায় জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা কার্যক্রম। সেই ১৭ মার্চ থেকে অবরুদ্ধতার জালে আটকে পড়া শিক্ষা কার্যক্রম ক্রান্তিকাল পার করছে। যেহেতু সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, সঙ্গত কারণেই ঘরে বসে অবসর সময় কাটানো অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারটি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। যদিও অনলাইনভিত্তিক পাঠ্যক্রম, যা কোনভাবেই সর্বজনীন হয়নি, তা চালু থাকলেও অগণিত শিশু শিক্ষার্থী তা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। করোনাকালে হতদরিদ্র দৈনিক খেটে খাওয়া দিনমজুরদের রুজি-রোজগারের ওপর যে চরম হুমকি তাতে দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য শিশু শিক্ষার্থীর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইতোমধ্যে ইউনিসেফের জরিপে উঠে আসে ঝরে পড়া শিশু শিক্ষার্থীরা অবর্ণনীয় কায়িক শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। খেটে খাওয়া পরিশ্রমী মানুষ করোনা দুর্যোগে তাদের স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের বিভিন্নভাবে শারীরিক শ্রমে নিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষা কার্যক্রমের দুর্বিষহকাল অতিক্রম করার পর তা খুলে দেয়ার নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় জোর দিয়ে বিদ্যালয়কে স্থবিরতার কঠিন আবর্ত থেকে বের করে আনতে চাইছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই এই কর্মযোগ চালু করার নির্দেশনাও এসে গেছে। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় সব শিক্ষার্থী বিশেষ করে শিশুরা পুনরায় তাদের পাঠযোগে ফিরে আসবে তো? এমনিতেই ফি বছর শিশুদের ঝরে পড়ার দৃশ্য ওঠা-নামা করলেও করোনার মহাদুর্বিপাকে তা একেবারেই নাকাল অবস্থায়। হতদরিদ্র বাবা-মারা কোন এক সময় তার শিশু সন্তানটিকে বিভিন্ন শ্রমে নিয়োগ করতে এক প্রকার বাধ্যই হয়। সেখানে মেয়ে শিশুরা পড়ে বাল্যবিয়ের অভিশাপে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে দীর্ঘ বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও সেখানে উপস্থিতির হার কত মাত্রায় কমবে তা অনিশ্চিত। ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ করা গেছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য, যা উদ্বেজনক। গত বছরের তুলনায় এবার ভর্তির সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশেরও কম। যেখানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোন টাকাই লাগে না, সেখানেই যদি এমন দুরবস্থা তাহলে অর্থ দিয়ে শিক্ষায় যুক্ত হওয়া তেমন সঙ্কট তো উত্তরণই অসম্ভব। সেক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যক্রমের বিপন্নতা কিভাবে কাটবে সেটা মূল্যায়ন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।