নতুন বইয়ের ঘ্রাণে সিলেটে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীরা

27

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের কারণে সিলেটে এবার বই উৎসব হয়নি। উৎসব না হলেও সংক্রামণ এড়াতে এবার ব্যতিক্রমীভাবে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকালে বই বিতরণ করা হয় সিলেটের স্কুলগুলোতে। ওইদিন দুপুর ১২টার মধ্যেই বই বিতরণ শেষ হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃথক শ্রেণী কক্ষে বই বিতরণ করেন শিক্ষকরা। তবে তা স্বাস্থ্যবিধি মেনে। উৎসব না হলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে আনন্দের ছাপ। নতুন বছরের প্রথম দিনে শীতকে উপেক্ষা করে সিলেটের স্কুলগুলোতে উপস্থিত হয় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। স্কুলের শিক্ষকরা একে একে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনেকদিন পর তাদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশী সচেত হয়ে উঠেন। স্কুলে বই নিতে আসা খুদে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে দেখা গেছে।
আখালিয়ায় সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাব যাতে শিক্ষার্থীদের উপর না পড়ে সেজন্য এবার তারা স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করার জন্য অভিভাবকদের আমন্ত্রণ জানান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিকাংশ অভিভাবক স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করেন।
তবে সিলেটের অধিকাংশ স্কুলে দেখা গেছে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বই সংগ্রহ করছেন। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেট নগরীর উমর শাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় বই নেয়ার জন্য প্রায় ১৩জন শিক্ষার্থী স্কুলের বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছেন। এ সময় কয়েকজন মাঠে খেলা করতে দেখা যায়। এত সকাল স্কুলে চলে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজেরা সুলতানার মা জহুরা বেগম জানান, মেয়ে জানে বছরের প্রথম দিন বই পাবে। সেজন্য আগের দিন রাত স্কুলের জামা আলমিরা থেকে বের করে রাখে। সকাল সাড়ে ৭টায় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে তাড়া দিয়ে স্কুল খোলার আগেই আমাকে স্কুলে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে নাজেরা বলেন, আগে আসলে আগে নতুন বই পাবো। গত বছরে গণিতের কাটা-ছেড়া পেয়েছি। তাই এবার ভালো বইয়ের জন্য আগে এসেছি।
সিলেটের জিন্দাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই নিতে আসা আব্দুল মোছাব্বির নামের এক অভিভাবক জানান, বই উৎসব না হওয়ায় খুবই ভালো হয়েছে। বই পেয়েছি এখন স্কুল ব্যাগ কিনে বাসা যাব।
সিলেটের শিক্ষা অফিসার বায়েজিদ খান বলেন, এবার সিলেটে কোন বই উৎসব না হলেও বই নিতে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। অনেক দিন পর বইয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীরাও বেশ খুশি। যারা নির্ধারিত সময়ে বই নিতে পারেননি তারা স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করতে পারবেন। সিলেটে উৎসব না হলেও উৎসব মুখোর পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, সিলেটের ১৩ উপজেলায় ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি, প্রাথমিক স্তর এবং নৃ-গোষ্ঠীর বই বরাদ্দের কথা ছিল ২৬ লাখ ৮ হাজার ৬২৬টি। এই চাহিদার মধ্যেও প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ২১ লাখ ৭ হাজার ২৬টি। সেই হিসেব অনুসারে এখনও সিলেটের ১৩ উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ বইয়ের। ঘাটতি হওয়া বইগুলোর প্রিন্ট শেষ হলেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে। এর মধ্যে ৬টি উপজেলায় শতভাগ বই পৌঁছালেও অন্য ৭টি উপজেলায় শতভাগ বই এখনও পৌঁছায়নি। সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৭২ হাজার ৬০০। বিশ্বনাথ উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৫১ হাজার ৭৪০। বিয়ানীবাজার উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৬৯ হাজার ৮৫০। জকিগঞ্জ উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৭৬ হাজার ৬৫০। জৈন্তাপুর উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৫৮ হাজার ২৩২। গোয়াইনঘাট উপজেলায় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ৯২ হাজার ৫৪৮ এবং কোম্পানীগঞ্জে বইয়ের ঘাটতি রয়েছে ১৬ হাজার ৯৮০।
সরকারি কিন্ডারগার্টেন : বছরের প্রথম দিনে সিলেট জিন্দাবাজারস্থ সরকারি কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীদের হাতে এসব নতুন পাঠ্য বই তুলে দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার চৌধুরী।
এসময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে দীর্ঘ সময় পরে বিদ্যালয়ে আসতে পেরে হাসৌজ্জল মুখে নতুন পাঠ্য বই নিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের হতে দেখা গেছে।
নতুন পাঠ্যবই বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন, সহকারি শিক্ষক ছন্দা রানী দাস, মালেকা আক্তার জাহান, ফাহমিদা পারভিন, কুমকুম ইয়াসমিন, নিপা চৌধুরী, রোমানা বেগম, সুলতান আহমদ, অভিভাবক সাংবাদিক মো. ছুরত আলী, মো. ইমরান, রোকেয়া বেগম, রহিমা আক্তার নিপা প্রমুখ।
জহির-তাহির স্কুল : নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানপাড়াস্থ জহির-তাহির মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল বাছিতের সভাপতিত্বে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিসিকের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজম খান। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সরকার বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে।
বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ ভট্টাচার্য্য, এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. ছয়েফ খান, কিশলয় কিন্ডার কার্টেনের অধ্যক্ষ শমসের সিরাজ সোহেল।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিপংকর রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল কাইয়ূম, মো. লোকমান হেকিম, দীপ্তা দে, মোশাররফ হোসেন, বিধান রঞ্জন ধর, প্রশান্ত পাল, কামরুন্নাহার শাপলা, সম্পা রায়, শীপ্রা রানী রায়, ডালিয়া শাহানা, স্বপ্না পাল, কিশলয় কিন্ডার কার্টেনের শিক্ষক প্রিতেশ তালুকদার প্রমুখ।
হলিসিটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ : বছরের প্রথম দিনে বই উৎসবে মাতোয়ারা হলিসিটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সুবিদবাজারস্থ হলিসিটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে ও সকল স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বই বিতরণী অনুষ্ঠান-২০২১ অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যুব সংগঠক শাহ মো. লোকমান আলী, প্রিন্সিপাল শিলা দেবী, ভাইস প্রিন্সিপাল সতীশ রুদ্র পাল, ইনচার্জ সাবনাজ সাবরিনা (কোয়েলী), সিনিয়র শিক্ষিকা কানিজ ফাতেমা, নাজিফা জাহান এবং সহকারী শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার, পূরবী নাথ,ফৌজিয়া বিনতে রিমি, ফাতেহা বেগম, রোজিনা আক্তার,আফরোজা শাহরিয়া প্রমুখ।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরেও ইংরেজি নববর্ষের দিন সিলেটের সুনামধন্য বিদ্যাপীঠ হলিসিটি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ করা হয়। নতুন বই হাতে পেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।