স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জে ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের (নোহ) ধাক্কায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৩ যাত্রীসহ ৪ জন নিহত ও ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে পশ্চিম বাজার এলাকার মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ মর্মান্তিক সড়ক দুঘর্টনাটি ঘটে।
নিহতরা হচ্ছেন- বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বারইগ্রামের মৃত কুনু মিয়ার পুত্র রাজন আহমদ (২৭), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র ও মাইকোবাস চালক সুনাম আহমদ (২৬) এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার শিশু পুত্র হাসান আহমদ (৮)। আর অগ্নিদগ্ধ হওয়া অপর মেহেদী হাসান (৫) নামে এক শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মারা যায়। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদেরকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত মেহেদী হাসান দুর্ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তী কলোনির বাসিন্দা। দুর্ঘটনার সময় নোহা গাড়ির সিল্ডিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সৃষ্ট আগুন উড়ে গিয়ে ওই শিশুর উপর পড়ে। শিশুটি তখন ঘরের বাইরে ছিলো।
মেহেদী হাসানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা মা মনতারা বেগমের। চিৎকার করে কাঁদছেন। বিলাপ করে বলছেন- চোখের পলকেই হারিয়ে গেলে ছেলেটা। তাকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা। কথা হয় মেহেদীর খালা মনবালার সাথে। তিনি বলেন, ভোরে আমাদের ঘরের পাশে একটা এক্সিডেন্ট ঘটে। দুই গাড়ির এক্সিডেন্টের পর আগুন লেগে যায়। এই শব্দ শুনেই মেহেদি ঘরের বাইরে গিয়েছিলো। এসময় গাড়ির বিস্ফোরিত সিলিন্ডারের একটি টুকরো এসে মেহেদীর উপর পড়ে। খালা জানান, তার নিজের দুই মেয়ে। আর মেহেদীরা দুই বোন এক ভাই। চার বোনের পর একমাত্র ভাই হওয়ায় সবার আদরের ছিলো মেহেদী। তাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে। গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জে একটি কলোনিতে বামা-মায়ের সাথে থাকতো সে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পন্যবাহী একটি ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস (নোহা) ধাক্কা দিলে নোহার সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই ৩ জন যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরো ৩ জন যাত্রী। মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পাশ্ববর্তী কলোনিতে পড়ে গিয়ে মারা যায় একটি শিশু। তার পিতা একজন ভ্যানচালক।
ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক আলাউদ্দিন মনির বলেন, ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে খবর পেয়ে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় নোহা গাড়িটি জ্বলে ভস্মিভূত হয়ে গেছে এবং ট্রাকের পেছনদিকে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভায়। তবে ফায়ার সার্ভিসের দল যাওয়ার আগেই ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় এক শিশু। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। তারা ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সিলেট জেলা পুলিশের গোলাপগঞ্জ সার্কেলের এএসপি রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ভেতরের চালক-যাত্রীসহ ৩ জন মারা যান। আর সিলিন্ডারের টুকরো ছিটকে পড়ে পাশের বস্তির এক শিশু মারা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একশো ফুট দুরে সিলিন্ডারের টুকরো ছিটকে গিয়ে ওই শিশুটিকে আঘাত করে। নিহতদের লাশ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং আহতদের একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।