স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমা কদমতলী এলাকায় সিলেট-মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ রোডে চালু হওয়া বিআরটিসির নতুন বাস চালু হলেও বন্ধ করে কাউন্টারে হামলা, ভাংচুর ও ম্যানেজারকে মারধর চালিয়েছে সাধারণ পরিবহন শ্রমিকরা। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা এসে বিআরটিসি কাউন্টারে তালা লাগিয়ে দেয় এবং ম্যানেজারের সরকারি গাড়ি ভাংচুর করে।
পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পরিবহন শ্রমিকদের বাধা ও হামলা সত্ত্বেও হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে সিলেট ছেড়ে গেছে বিআরটিসির বাস। এ বাসটি কদমতলী বিআরটিসি কাউন্টার থেকে হবিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিআরটিসির সিলেট জেলা প্রতিনিধি শোয়াইব শুভ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গলগামী বাসটি নির্ধারিত সময় সকাল ৯টায়ই কাউন্টার ছেড়ে গিয়েছিলো। তবে শেরপুরে ওই বাসটি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এক ঘন্টা পরই আবার বাসটি চালু করা হয়। যা ইতোমধ্যে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। শুভ জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকেলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে এই সভায় বিআরটিসির কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন। আজ সোমবার থেকে বাস চলাচলের বিষয়ে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
এর আগে সকাল ৯টায় সিলেটের কদমতলী এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার বিআরটিসির কাউন্টার থেকে বাস দুটি শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জের উদ্যেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো। একটি বাস কাউন্টার ছেড়ে গেলেও পথে আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। আরেকটি বাস ছাড়ার আগেই অর্ধশতাধিক পরিবহন শ্রমিকরা বিআরটিসির কাউকন্টারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মারধর করে। তাদের তান্ডবে নির্ধারিত সময়ে বাসটি সিলেট ছেড়ে যেতে পারেনি।
পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, এই দুই রুটেই পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। বিআরটিসি ইচ্ছে করলেই যে কোনো সড়কে বাস সার্ভিস শুরু করতে পারে না। এটা তাদের আইনের পরিপন্থী। এছাড়া বাস চালুর ব্যাপারে এই দুই রুটের মালিক-শ্রমিকদের সাথে কোনো আলোচনাও করেনি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। তাই এসব রুটে বিআরটিসির বাস চলতে দেবেন না তারা। তবে বিআরটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই দুই রুটে এতোদিন যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা করে আসছিলো পরিবহন মালিকরা। বিআরটিসি বাস চালু হওয়ায় তাদের ব্যবসা কমে যেতে পারে এই ভয়ে বাস চালুতে বাধা দিচ্ছে।
বিআরটিসি’র সিলেট কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অর্ধশতাধিক পরিবহন শ্রমিক এসে কাউন্টারে হামলা চালায়। এসময় তারা কাউন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজারের সরকারি গাড়ি ভাংচুর করে।
তাদের অভিযোগ, তাদের কাউন্টার থেকে নগদ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং একটি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয় পরিবহন শ্রমিকরা।
এ ব্যপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন বিআরটিসি সিলেট ডিপোর ম্যানেজার জুলফিকার আলী। তিনি অভিযোগ করেন, সকালে ৯ টায় শেরপুর মৌলভীবাজারগামী একটি বাস শেরপুরে অবরোধ করে পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর সকাল সাড়ে ৯ টায় হুমায়ুন রশীদ চত্বরে বিআরটিসি কাউন্টারে পরিবহন শ্রমিকরা এসে অতর্কিতে হামলা চালায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেটের কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিক বলেন, কয়েকজন শ্রমিক বিআরটিসির কাউন্টারে গিয়ে বাস চলাচলে আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু কোনো উশৃঙ্খল আচরণ করেনি।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরআগে গত ২২ ডিসেম্বর সিলেট-শ্রীমঙ্গল ও সিলেট-হবিগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিলো। উদ্বোধনের দিন থেকেই এই দুই রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলে আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যদিও যাত্রীরা বিআরটিসির বাসকে স্বাগত জানিয়েছেন।