কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যাকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াবেন না ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি মামলার প্রধান আসামি বরখাস্তকৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পক্ষে কৌশুলী নিযুক্ত হন আইনজীবী এডভোকেট মো. মিসবাউর রহমান আলম।
আকবরের পক্ষে লড়ার ঘোষণা দেওয়ায় সাধারণ মানুষ থেকে সহ-কর্মীদেরও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। এ কারণে আকবরের পক্ষে দায়েরকৃত ওকালতনামা সারেন্ডার করেন গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর)। এ সংক্রান্ত একটি আবেদনও আদালতে দাখিল করেন তিনি।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানান এডভোকেট মো. মিসবাউর রহমান আলম। বিজ্ঞপ্তিটি হুবহু তোলে ধরা হলো-
এডভোকেট মিসবাউর রহমানের ভাষ্যমতে, ‘বিশ বছরের ওকালতি জীবনে হত্যা-অপহরণসহ অনেক মামলা পরিচালনা করেছি। আমার কাছে রায়হান হত্যা মামলাও তেমনি একটি মামলা ছিল। অধিক অর্থপ্রাপ্তি নয় বরং রায়হানের পক্ষে তার মামলা পরিচালনার জন্য যোগাযোগ করা হলে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই মামলাটি গ্রহণ করি।
হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের মামলাটি আমার কাছে ছিল একেবারেই নতুন ধরনের এবং চ্যালেঞ্জিং। তাই আগ-পিছ না ভেবেই মামলাটি গ্রহণ করি। আমার কাছে মনে হয়েছিল এ মামলাটি আমার পেশাগত জীবনে আরেকটি নতুন পালক সংযুক্ত করবে।
সিলেটের আইন অজ্ঞনে এ আইনে এর আগে এ রূপ কোনো মামলা হয়নি। তাই এ মামলা পরিচালনা করে আমি আমার আইন অঙ্গনে পথ চলায় অনেক সমৃদ্ধ হতে পারবো, অর্থপ্রাপ্তি কখনোই আমার কাছে মুখ্য ছিল না। আকবরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নিশ্চিতভাবেই তার সত্যতা পাওয়া যাবে।
আইনি সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে দণ্ডিত করা যায় না। তদুপরি এ মামলাটি সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশের মামলা। এ রূপ মামলায় আসামি আইনজীবী নিয়োগে অক্ষম হলে রাষ্ট্র তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে বাধ্য।
কোনো কারণে যদি আসামিপক্ষ আইনজীবী পেতে ব্যর্থ হয়, তবে পুরো বিচার প্রক্রিয়াই আটকে যাবে। বিচার প্রার্থীই তাতে বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ দৃষ্টিকোন থেকে আকবরের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হতে সম্মত হই। কিন্তু পরবর্তীতে রায়হানের বোন ফেসবুক লাইভে এসে আইনজীবী নিয়োগের আবশ্যকতা স্বীকার করলেও এ রূপ নিয়োগের নিন্দা জানিয়ে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন।
বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আসামিপক্ষে আইনজীবী নিয়োগ তিনি ভালোভাবে নেননি। স্বজন হারানো যে কারো পক্ষে এমন আবেগতাড়িত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তার লাইভের প্রতিক্রিয়ায় কিছু মানুষের চরম নেতিবাচক ও অশালীন মন্তব্য আমাকে হতাশ করেছে। কিছু অনলাইন পোর্টাল এবং কিছু মানুষ আমার শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়রকে জড়িয়ে ও আমার পরিবার সম্পর্কে বিরূপ-অরুচিকর মন্তব্য করেছে, যা আমার সিনিয়র ও আমার পরিবারকে আহত করেছে।
আমার কারণে আমার সিনিয়র বা পরিবার এ রূপ মন্তব্যের শিকার হোক, তা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তাই আমার শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়র ও পরিবারকে এ রূপ মন্তব্য থেকে রক্ষার স্বার্থে আকবরের পক্ষে আইনি লড়াই থেকে বিরত হলাম। সে লক্ষ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর আকবরের পক্ষে এর আগে দায়েরকৃত ওকালতনামা সারেন্ডার করেছি এবং এ সংক্রান্ত একটি আবেদনও বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। আমি আবারও সবাইকে এটা নিশ্চিত করতে চাই, অর্থের লোভে নয়, বরং পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই আমি মামলা পরিচালনায় সম্মত হয়েছিলাম।
সিলেটের আদালত পাড়ায় আমার দু’দশকের পথচলায় আমি চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে আইন পেশা পরিচালনা করা। যারা আমাকে চেনেন তারাই এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন।
এ মামলায় আইনজীবী নিযুক্ত হওয়ায় আমাকে নিয়ে যারা বিরূপ মন্তব্য করেছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আকবর কোনো আইনজীবী না পেলে এ মামলার বিচার হবে না, সেটা যেমন রায়হানের পরিবারের জন্য সুখকর হবে না, তেমনি তা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠারও অন্তরায় হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ’