সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে সিলেট বিভাগে ৭২ ঘন্টার গণ ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন ও সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের ধর্মঘটের তৃতীয় দিন অতিবাহিত করছে। এতে যাত্রী ভোগন্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটার্স এজেন্টস এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন।
এই সুযোগে তারা অন্য পরিবহনের সাথে সুর মিলিয়ে সিলেট বিভাগে তেলের পাম্পগুলোতে নিম্নমানের তেল সরবরাহ করায় অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রবিবার সকাল পর্যন্ত ৬ দফা দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এসব সংগঠনের দাবী-দাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য গতকাল রাত পর্যন্ত কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এদিকে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো শহরে প্রবেশ করতে না পারায় কাঁচামালসহ লক্ষ লক্ষ টাকার বিভিন্ন নিত্যপণ্য মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গতকাল বুধবারও সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গণ ও পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা বাস-
মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরি, মাইক্রোবাস ও সিএনজি শ্রমিকরা নিজ নিজ টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে মিছিল সমাবেশ ও পথে পথে পিকেটিং অব্যাহত রেখেছেন। বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণ সুরমার প্রবেশমুখ হুমায়ুন রশিদ চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন বাংলাদেশ সড়ক শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রী সহ সভাপতি, সিলেট বিভাগীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল, সদস্য সচিব আবু সরকার, সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জিয়াউল কবির পলাশ এর নেতৃত্বে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সিলেট থেকে ঢাকা বা দূরবর্তী স্থানগামী যাত্রীরা ট্রেনমুখী হওয়ায় ট্রেনে যাত্রী চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সিলেটের সব পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়ে গত মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই দুইদিন ধরে চাপ বেড়েছে ট্রেনপথে। বিশেষ করে সকাল ও দুপুরে সিলেট রেলস্টেশনে যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভিড়, গতকাল বুধবারও একেই অবস্থা রেল স্টেশনে আবার অনেক যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষামান থাকতেও দেখা গেছে।
গতকাল বুধবার সিলেট নগরী ও পাশ্বর্তী উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সিএনজি অটোরিকশা না থাকায় রিক্সাচালক ও মোটরসাইকেল রাইডাররা জিন্দাবাজার থেকে মিরের ময়দান যেতে হলে রিকশায় ৩০ টাকা বদলে নিচ্ছে ৬০টাকা, আবার তালতলা থেকে জেল রোডে নিচ্ছে ৫০ টাকা, রেলগেইট থেকে চন্ডিপুল অটোরিকশায় ১০ টাকার স্থানে ৫০টাকা। মোটরসাইকেল রাইডাররা যে কাউকে দেখলে বলছেন কোথায় যাবেন। জায়গার নাম বলার সাথে সাথে এক রেইট বলে গাড়িতে তুলে নিচ্ছেন। সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে পুরানপুলের মুখ (ক্বিন ব্রিজ) মোটরসাইকেলে ১৫০-২০০টাকা, রশিদপুর থেকে ১০০-১৫০টাকা, ওসমানীনগরের কুরুয়া বাজার থেকে ২৫০-৩০০টাকা নিচ্ছে। আবার জিতু মিয়ার পয়েন্ট থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে ১০০টাকা, তেমুখী থেকে চন্ডিপুল ১৫০টাকা করে অধিক ভাড়া নিয়ে তারা যাত্রী সেবা দিচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ধর্মঘটের কবলে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে পারছে না শহরে। চন্ডিপুল থেকে কদমতলী পর্যন্ত এসব পণ্যবাহী ট্রাক কাঁচামালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও পণ্য খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল।
গতকাল বুধবার দুপুরে দেখা গেছে, কদমতলী থেকে চন্ডিপুল পর্যন্ত সড়কের এক পাশে ট্রাকের দীর্ঘ সারি। কাঁচামালসহ বিভিন্ন নিত্যপন্য নিয়ে ট্রাকগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রাতে গাড়ীগুলো সিলেটে আসলেও পণ্য পরিবহনের শ্রমিকদের বাধার মুখে প্রবেশ করতে পারেননি নগরীতে। তাই মালভর্তি ট্রাক নগরীর বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
কাঁচামাল নিয়ে এসেছেন ট্রাক চালক ফখরুল মিয়া। বুধবার ভোরে ট্রাক নিয়ে সিলেটে প্রবেশ করলেও স্থানীয় পণ্যপরিবহনের শ্রমিকদের বাধার মুখে সিলেটের সোবহানীঘাট কাঁচাবাজারে প্রবেশ করতে পারেননি। একই অবস্থা জামাল মিয়ার। তিনি রাজশাহী থেকে পেঁয়াজ নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর গন্তব্য ছিলো কালীঘাট। কিন্তু তিনিও প্রবেশ করতে পারেননি। এদিকে, পণ্য খালাস করতে না পারায় ইতোমধ্যে কাঁচামালে পচন ধরতে শুরু করেছে। তাই ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই অনেক ব্যবসায়ী অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন মালামাল। ট্রাক থেকে কেউ লেগুনা, ব্যানগাড়ি, অটো-টেম্পুতে কিনে নিচ্ছেন।
সিলেট বিভাগে ৭২ ঘন্টার গণ ও পণ্য পরিবহনের ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গণ ও পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা বাস-মিনিবাস, ট্রাক, ট্যাংকলরি, মাইক্রোবাস ও সিএনজি শ্রমিকরা নিজ নিজ টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে মিছিল সমাবেশ করেছেন।
বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন বাংলাদেশ সড়ক শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি, সিলেট বিভাগীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক আলহাজ¦ গোলাম হাদী ছয়ফুল, সদস্য সচিব আবু সরকার, সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জিয়াউল কবির পলাশ এর নেতৃত্বে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও সিলেট জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সহ সভাপতি হেলাল আহমদ, নাজিম উদ্দিন লস্কর, মুক্তার আহমদ, সহ সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ জুনু, অর্থ সম্পাদক আমিনুজ্জামান জোয়াহির, প্রচার সম্পাদক শেকু আহমদ, দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ, সিলেট বিভাগীয় ট্রাক মালিক ঐক্য পরিষদ ও সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ ফয়েজ, বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ নুরুল আমিন, সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি সভাপতি আব্দুস সালাম, সহ সভাপতি জুবের আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমির উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, সিলেট জেলা বাস মিনিবাস, মাইক্রেবাস শ্রমিক ইউনিয়ন (১৪১৮) কার্যকরি সভাপতি মোঃ রুনু মিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ সামছুল ইসলাম মানিক, মিতালী বাস শ্রমিক শাখার সভাপতি রিয়াজ মিয়া, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটো, অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ জাকারিয়া, সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জিক লিটু, প্রচার সম্পাদক নুর আহমদ খান সাদেক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সোহরাব আলী, নির্বাহী সদস্য আকমাম আব্দুল্লাহ, কোম্পানীগঞ্জ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বাবুল, জেলা ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক সামাদ রহমান, কোষাধ্যক্ষ রাজু আহমদ তুরু, নির্বাহী সদস্য শরিফ আহমদ, আলী আহমদ আলী, জলিল আহমদ, বেলাল আহমদ, দক্ষিণ সুরমা-মোগলাবাজার আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি কাউছার আহমদ, সহ সভাপতি জুমায়েল ইসলাম জুমেল, সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমদ, সহ সাধারণ সম্পাদক ফলিক আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি রাসেল আহমদ টিটু, পূর্ব গোয়াইনঘাট আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ছমেদ মিয়া, জালালাবাদ থানা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ কালা মিয়া, গোলাপগঞ্জ আাঞ্চলিক কমিটির সভাপতি বদরুল ইসলাম, বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মানিক উদ্দিন প্রমুখ।