সিলেটের বধ্যভূমি সংরক্ষণ

37

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি রক্ষা-সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার ব্যবস্থা করতে কারও মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। মহান স্বাধীনতার অর্ধ-শতাধিক বছর অতিবাহিত হলেও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান সমূহের বধ্যভূমি সংরক্ষিত হচ্ছে না। যারা দেশও জাতির জন্যে মরণপণ যুদ্ধে প্রাণ দিল, সামনা-সামনি মুখোমুখি যুদ্ধ করে জীবন দিল, তাদের যুদ্ধ ক্ষেত্র গুলো এখনও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে মুক্তিযুদ্ধে যে সব মুক্তিযোদ্ধা আত্মহুতি দিয়েছিলেন, তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে।
সিলেট অঞ্চলে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মার্চ থেকেই বাঙালি জাতি প্রতিরোধ গড়ে তুলে। হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ ও প্রতিরোধ করতে বাঙালি বীর সন্তানদের অকাতরে প্রাণ দিতে হয়েছে। সিলেটের প্রত্যন্তাঞ্চলে রয়েছে শত-শত বধ্যভূমি যে সমস্থ স্থান সমূহে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসরা মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ নিরীহ বাঙালি সন্তানদেরকে ধরে নিয়ে মুখ-চোখ বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে ফেলে আসতো। কোনো কোনো স্থানে জীবন্ত মানুষকে মাটি চাপা দিয়ে হত্যা করেছে, এমনকি বধ্যভূমির আনাচে-কানাচে মানুষকে গুলি করে ফেলে যেত। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে এলাকা ভিত্তিক স্বাধীনতা প্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারীদেরকে ধরে নিয়ে এ সব বধ্যভূমিতে হত্যা করে রাখে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি থানা সদরসহ গ্রামাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হতো। এমনি সীমান্তিক জকিগঞ্জ অঞ্চলে মসকুন্দাখালের পারের আকদ্দছের বাড়িটি ছিল বধ্যভূমি, এ বধ্যভূমি থেকে কোন এক সময়ে শহীদদের লাশ গুলো উত্তোলন করে নিজ-নিজ বাড়িতে নিয়ে কবরস্থ করা হলেও এ কবর গুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থাই নেই। এ থানার আটগ্রামের পয়েণ্টে এলাকায় ছিল একটি বধ্যভূমি এ ছাড়া ও গোলাপগঞ্জ, সিলেট সদর, বিশেষ করে জগন্নাথপুরের শিরামিশি, রানীগঞ্জ, চিন্তামনিসহ অসংখ্যক বধ্যভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই।
সম্প্রতি দেশে যেভাবে হানাদার বাহিনীর উত্তোরসূরীরা তাদের সম্প্রাদায়িকতার বীজ রোপণ করছে, তাতে মনে হয়েছে, আবার একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা মাথাউঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যেমনি গত জোট সরকারের আমলে বাংলা ভাইয়ের জন্ম দেয়া ছাড়াও স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের হাতে বাংলার রক্তে মাখা লাল-সবুজে আবৃত পতাকা উড়িয়ে সাম্প্রাদায়িক রাজনীতি শুরু করেছিল। এদের সাম্প্রাদায়িক অপতৎপরতা রোধে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার ঘটানোর বিকল্প নেই।
বাঙালি জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় সিলেট সহ সারাদেশের বধ্যভূমির রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।