কাজিরাবাজার ডেস্ক :
দেশে এলপিজি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়।
এমনকি সরকার যখন এর দাম একটি সীমারেখায় বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঠিক তখনই বোতলজাত গ্যাসের দর ১০-১১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত এলপি গ্যাস লিমিটেড থেকে শুরু করে অন্যরা। সরকার যদি এখন তাদের দেওয়া প্রস্তাব আমলে নেয়, তাহলে ইতোমধ্যেই বেশি দামে বিক্রি হওয়া রান্নার অতিপ্রয়োজনীয় এ জ্বালানির জন্য ক্রেতাদের আরও চড়া মূল্য দিতে হবে।
ইতোপূর্বে, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের করা এক রিট শুনানির পর হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে দেশের বাজারে এলপিজির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার আদেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্ট ন্যায্যমূল্য সিলিন্ডারজাত গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার আদেশ দেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) পরিবর্তে বেসরকারি কোম্পানিগুলোই এলপিজির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এজন্যেই ক্যাব ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিশৃঙ্খলভাবে দাম বাড়িয়ে থাকে। একারণে বিইআরসি’কে দর নিয়ন্ত্রণে নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে, বলেই জানায় ক্যাব।
গত মাসে বোতলজাত গ্যাস বিপণনকারী কোম্পানিগুলো আরেকদফা এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ায়। তাদের যুক্তি ছিল, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে তারাও দরবৃদ্ধি করেছে।
কিন্তু, একে অযৌক্তিক বলে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম জানান, ‘দামের বিষয়টি এখন হাইকোর্টের আওতাধীন থাকায় এলপিজি কোম্পানিগুলো চাইলেই এমনটা করার অধিকার রাখে না।’
তবে এলপিজি অপারেটরদের দাবি, বৈরি প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে তারা তাদের নির্ধারিত লাভের চাইতে কমমূল্যে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করছে।
দেশে বর্তমানে ২৫টি প্রতিষ্ঠান এলপিজি অপারেটর হিসেবে ব্যবসা করছে। তাদের সম্মিলিত সরবরাহ সক্ষমতা বার্ষিক ২০ লাখ টন। গত এক দশকে এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ১১৭ কোটি ডলারের। বিনিয়োগের আধিক্যই এখন পুঁজি লগ্নীকারীদের জন্য বাজারে টিকে থাকাকে কঠিন করে তুলেছে।
এই যুক্তিতে গত ১৫ ডিসেম্বর এলপিজি অপারেটরদের কাছ থেকে মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব পায় বিইআরসি। তার প্রেক্ষিতে দাম নির্ধারণের লক্ষ্যে আগামী ১৪,১৭ ও ১৮ জানুয়ারি গণশুনানির তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু, এই দর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নাকি প্রতিমাসে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এব্যাপারে বিইআরসি সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান যে, তারা দর নির্দিষ্টে একটি পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘প্রস্তাব কেবলমাত্র আমাদের হাতে এসেছে। এরপর শুনানির আয়োজন করা হচ্ছে, তার ভিত্তিতেই দর নির্ধারণের পদ্ধতি কার্যকর করা হবে।’
বিইআরসি মোট তিনটি প্রস্তাবনা পেয়েছে। এর একটি দেয় এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব), দ্বিতীয়টি দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন এলপি গ্যাস লিমিটেড এবং শেষটি দিয়েছে প্রমিতা এলপিজি।
এরমধ্যে এলপিজি অপারেটরদের জাতীয় সংগঠন লোয়াব নিয়ামক সংস্থার প্রতি এলপিজির মূল্য বর্তমান খুচরা বাজারদরের চাইতে ১০-১১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
দর নির্ধারণে তারা একটি ফর্মুলা প্রস্তাব করে। সেখানে কোম্পানি পরিচালনা খরচ, আমদানি মূল্য এবং সকল ধরনের শুল্কের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করার আর্জি জানানো হয়।
লোয়াব প্রতিনিধিরা বলেন, নতুন ফর্মুলায় আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজি’র মূল দুই উপাদান বিউটেন এবং প্রোপেনের ক্রয়মূল্য পরিবর্তন হলে দেশের বাজারেও সেই অনুসারে দাম নির্ধারণের পদ্ধতি রাখা হয়েছে।
এব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, এলপিজি অপারেটররা যেভাবে দাম ঠিক করার প্রস্তাব দিয়েছে তাতে সারা বছর জুড়ে তারা মুনাফায় থাকতে পারবে।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ইতোমধ্যেই অপারেটররা দাম বাড়িয়েছে। তার উপর আবার নতুন করে ১০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব একেবারেই অযৌক্তিক, বলেই তারা জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, বিপিসি’র অঙ্গ:প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড আলাদা এক প্রস্তাবে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম বর্তমানের ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলেছে।
বেসরকারি কোম্পানিগুলোর চাইতে বিপিসি’র এলপিজি বেশ কমদামেই বিক্রি হয়। কারণ প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত এবং ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধিত কাঁচামাল ব্যবহার করে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত।
বিপিসির উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র সাড়ে ১৫ হাজার টন, তাই প্রতিষ্ঠানটির সিলিন্ডার থেকে যায় সিংহভাগ ভোক্তার নাগালের বাইরে। অথচ, দেশে এলপিজি’র বার্ষিক চাহিদা ১০ লাখ টন, সক্ষমতা বাড়ানো হলে সরকার এতে যেমন বেশি মুনাফা করতে পারতো, ঠিক তেমনি ভোক্তারাও উপকৃত হতেন।