কাজিরবাজার ডেস্ক :
কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ধরিত্রীকে বাঁচাতে শক্তিশালী বৈশ্বিক জলবায়ু জোটের জরুরি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, শতাব্দীর মধ্য ভাগের আগে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কার্যকরভাবে হ্রাস করে কার্বন ভারসাম্য আনয়নের দিকে এগিয়ে যেতে ইতিবাচক ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক জলবায়ু জোটের গুরুত্বের ওপর জোর দিতে চাই।
প্যারিস চুক্তির ৫ম বার্ষিকী উপলক্ষে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশ্ব গড়ার গতি তরান্বিত করার লক্ষ্যে বুধবার ‘থিম্পু অ্যামবিশন সামিট’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড করা এক ভাষণে এসব কথা বলা হয়।
অন্যান্যের মধ্যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কপ২৬ চেয়ার অলোক শর্মা এবং ইউএনএফসিসিসির নির্বাহী সম্পাদক প্যাট্রিশিয়া এসপিনোসা ইউএনএফসিসিসিতে এলডিসি গ্রুপের চেয়ার ভুটানের রাজকীয় সরকার আয়োজিত এই ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে জলবায়ু উদ্বাস্তু করে তুলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে আপনাদের জরুরি ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি। ইউএনএফসিসিসি আমাদের বৈশ্বিক অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের দেখিয়েছে যে একটি মহামারি কত দ্রুত একটি বিপর্যয়কর বিশ্ব সংকটে পরিণত হতে পারে এবং এটি আমাদের শিখিয়েছে যে জোরালো সম্মিলিত উদ্যোগই বিশ্বব্যাপী সংকট মোকাবিলার একমাত্র উপায়।
প্রধানমন্ত্রী প্যারিস চুক্তি জলবায়ু অর্থ সংস্থানের জন্য উন্নত দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা পুনর্নিশ্চিত করেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এমডিবিস, আইএফআইএসের রেয়াতি অর্থায়ন এবং কর মওকুফের মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নে আরও জোরদার ব্যবস্থার জন্য এগিয়ে আসা উচিত এবং সবার জন্য প্রযুক্তির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত। এ ছাড়া চরম আবহাওয়ার ঘটনা ইতিমধ্যে সহিংস সংঘাতের চেয়েও অনেক বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এ কারণেই ‘লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির’ বিধানকে মূলধারায় নিয়ে আসা উচিত। একইভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের স্থানান্তর ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক আলোচনায় যথাযথ মনোনিবেশ দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিসে কপ-২১ চলাকালীন বিশ্বনেতারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনে একটি যুগান্তকারী চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। তিনি আরও বলেন, তাই আমাদের নিজেদের এবং আমাদের গ্রহকে বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন সীমাবদ্ধ করতে আমাদের জোরদার, গতিশীল ও আশু কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।
জলবায়ুজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দক্ষিণ এশিয়াকে সবচেয়ে দুর্বল অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের স্তর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে উপকূলীয় ও ছোট দ্বীপগুলোর লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে কোনো অবদান না থাকলেও মোকাবিলা করার সীমিত ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।