কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকার আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজ করার কথা ভাবছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো হিসেবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেম স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৬ সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূ-মধ্য সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারে ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ফলে কক্সবাজার এলাকাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। চলতি বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দকৃত মোট ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার জোগান দেবে।
প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যম অগ্রাধিকার তালিকায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সাবমেরিন ক্যাবল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সংগ্রহ করে তা স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে ১৩ দশমিক ২৭৫ কিলোমিটার কোর সাবমেরিন ক্যাবল, এক হাজার ৮৫০ কিলোমিটার ব্রাঞ্চ সাবমেরিন ক্যাবল, যন্ত্রপাতি স্থাপন, লাইট আপ এবং সিঙ্গাপুর ও ফ্রান্স ল্যান্ডিং স্টেশনে ক্যারিয়ার নিউট্রাল পিওপি পর্যন্ত ল্যান্ড ক্যাবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে ল্যান্ডিং স্টেশনে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন, ডাটা সেন্টারের অবকাঠামো ও বৈদ্যুতিক কাজ, একটি ৫০০ কেভিএ স্ট্যান্ড বাই-ডিজেল জেনারেটর স্থাপন করা হবে। থাকবে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ সিস্টেম, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম।
প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ভবন এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হবে। একটি দুই হাজার ৪২৮ বর্গফুট দোতলা (নিচতলা খালি) ফাংশনাল বিল্ডিংসহ দুই হাজার ৫৯৫ বর্গফুট তিনতলা রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর ৯.গ এবং ১৭.৮ নম্বর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজিকরণে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে। সে বিবেচনায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশব্যাপী আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানসহ বর্ধিষ্ণু চাহিদা পূরণে বিএসসিসিএল-এর সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়বে। তাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সরকারের সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের আইসিটি সক্ষমতা বাড়বে। এর মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজিকরণ হবে। যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, ‘এ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইসিটি যোগাযোগ বাড়বে। এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবে। এর ফলে দেশে-বিদেশে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা প্রসারিত হবে, সহজ হবে।’