কাজিরবাজার ডেস্ক :
সমাজের সব স্তরের মানুষকে সম্মানের চোখে দেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এই সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি। মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে সকলে যেন ন্যায় বিচার পায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দুপুরে ১১৬, ১১৭ ও ১১৮ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী এবং সনদ বিতরণ করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন সরকারপ্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দেশটাকে উন্নত করার জন্য আমরা উপযুক্ত কর্মচারি গড়ে তুলতে চাই, মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়। প্রশাসনের সেবা পায়। নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার সুযোগ পায়।’
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি এবং মননকে দেশের কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। সবাইকে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগ প্রশাসনের কর্মচারিদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরকারি কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের উদ্ধৃতি দেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এ গরীব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’
ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি, রিকশাওয়ালাকে আপনি বলে সম্বোধন করেছি। কারণ, আমাদের বাবা-মা সেটাই শিখিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এই সমাজের প্রতি। প্রত্যেকের অবদান রয়েছে দেশের প্রতি। সেকথাটা মনে রাখতে হবে। তাছাড়া, কর্মক্ষেত্রে সকলে যেন ন্যায় বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।’
সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘সমাজে যেসব উপসর্গ মাঝে মাঝে দেখা দেয়, যেমন-নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধেও আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারো মুখ চেয়ে নয়, যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন, এটাই আমার কথা।’
‘অপরাধী যে দলের হোক বা যে কেউ হোন না কেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন, আমরা চাই’-যোগ করেন সরকারপ্রধান।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা কোর্সের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।
এ বছরের ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া ৫ মাসব্যাপী এবারের কোর্স করোনা বিভ্রাটে পড়ে বিলম্বিত হয় এবং অনলাইন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। ১১৬ জন অংশগ্রহণকারীর সকলেই কৃতকার্য হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন মহিলা রয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তিনজন শিক্ষার্থীর হাতে রেক্টরস পদক তুলে দেন।
সনদপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এই করোনাকালীন অবস্থার মধ্যেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। কাজেই, আপনাদের এই অর্জিত জ্ঞান আপনারা দেশের কাজে অবশ্যই লাগাবেন। কেননা দেশটাকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেটা মনে রাখতে হবে।’