কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলতি বছরেই সুখবর পাচ্ছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) চাকরিপ্রত্যাশীরা। করোনার ধাক্কায় চাকরির অনেক পরীক্ষা থেমে থাকলেও সাধারণ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে শূন্যপদের চাহিদা জমা হয়েছে জনপ্রশাসনে। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে সবুজ সংকেত পেলে ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে ডিসেম্বরের মধ্যেই।
করোনার মধ্যে অন্যান্য ক্ষেত্রের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্য খাতে একাধিক নিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিশেষ বিসিএসে একটি নিয়োগও দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য ক্যাডারে আরেকটি বিশেষ বিসিএস (৪২তম) আয়োজনের কার্যক্রম চলছে। এসংক্রান্ত কিছু বিধি সংশোধনের কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সাধারণ বিসিএস নিয়েও কাজ চলছে পুরোদমে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘সাধারণ বিসিএস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে আশা করি।’
করোনার কারণে সাধারণ ছুটি থাকাকালীন যেসব চাকরির বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল বা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল সেসব চাকরির প্রার্থীদের জন্য বয়স ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেই ঘোষণায় বিসিএসের জন্য বয়স ছাড় দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের টার্গেট থাকে। যেহেতু করোনা বয়স ছাড় থেকে বিসিএসকে বাইরে রাখা হয়েছে তাই অন্যান্য বছরের মতো এবারও স্বাভাবিক সময় বিবেচনাতেই সাধারণ বিসিএস আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন ২৫ মার্চ ২০২০ কে ৩০ বছর ধরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশনা দেয়। তাতে বলা হয়, ‘২৫ মার্চের আগে নিয়োগের ছাড়পত্র গ্রহণসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সত্ত্বেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, সেসব দপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৫ মার্চ তারিখে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে অনুরোধ জানানো হলো। তবে এই বয়স ছাড় বিসিএসের জন্য প্রযোজ্য নয়।’
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির মধ্যে বিসিএস ক্যাডার বেশির ভাগ তরুণের এক নম্বর পছন্দ। বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে উল্লেখযোগ্য হারে বেতন বাড়ানোর পর থেকে বিসিএসে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি চাকরিপ্রত্যাশী অংশগ্রহণ করছেন। মর্যাদাপূর্ণ এই চাকরিতে ঢোকার সুযোগ বাড়াতে দেশব্যাপী প্রায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএসসহ সব প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা তুলে দিতে বাধ্য হয় সরকার।
বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ থেকে পাস করা মাহমুদুল হাসান মাসুদ। নতুন বিসিএসের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবাই আগ্রহভরে অপেক্ষায় আছেন কবে পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে যদি নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আসে তাতে ভালোই হবে। এক প্রস্তুতিতে দুই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে। তবে ৪১তম বিসিএসের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করলে ভালো হয়।’
বিসিএস পরীক্ষা থেকে নিয়োগ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। গত কয়েক বছর বিসিএস পরীক্ষা ও নিয়োগ নিয়মিত হচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের ছোবল লেগেছে এখানেও। সর্বশেষ ৩৭তম সাধারণ বিসিএসের উত্তীর্ণরা সব প্রক্রিয়া শেষ করে কাজে যোগ দিতে পেরেছেন। ৩৮তম বিসিএসের ভাইভা শেষে মেডিক্যাল টেস্ট পর্যন্ত হয়ে গেছে। তবে এখনো গেজেট হয়নি। এরই মধ্যে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের (স্বাস্থ্য) কার্যক্রম শেষ হয়ে উত্তীর্ণরা কাজে যোগ দিয়েছেন। করোনাকালের এই বিসিএসে প্রথম নিয়োগ পাওয়াদের পরও যারা উত্তীর্ণ ছিলেন তাদের থেকে আরো দুই হাজার জনকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৪০তম সাধারণ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হলেও রেজাল্ট প্রকাশ হয়নি। ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে গত বছরের ২৭ নভেম্বর। গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে পরীক্ষার আশায় ছিলেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। কিন্তু করোনার কারণে সেই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এখন ঠিক কবে পরীক্ষা হবে তার কোনো সঠিক তারিখ দিতে পারেনি পিএসসি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরো কিছু ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে। ৪২তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিএসসিতে এখন নন-ক্যাডার চাকরির হাইস্কুল ভাইবা চলছে। নভেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে গেলে ডিসেম্বরে নতুন পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হতে পারে।