গ্রামের রাস্তা ভারি যান চলাচলের উপযোগী করে বানাতে হবে – প্রধানমন্ত্রী

39
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত হয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্রামের রাস্তায় যাতে ভারি যানবাহন চলতে পারে, সেগুলো এখন থেকে সেভাবেই নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে রাতে ফ্লাইট ওঠা নামার উপযোগী করতে পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করাসহ ভূগর্ভের পানির ব্যবহার কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশনা দেন।
সভায় ৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ১ হাজার ৫২৪ কোটি ৭৮ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৪৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। গণভবন থেকে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। একনেক সভা শেষে প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম। ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ।
একনেক সভায় গ্রামীণ সড়ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। বেশি লোডের গাড়ি চলাচল করায় এগুলো টেকসই হচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অনেক বছর ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনেক রাস্তা তৈরি করে ফেলেছি। ফলে রাস্তা বানানোর জন্য যে বরাদ্দ, সেটার যেন যথাযথ ব্যবহার হয়। এজন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে। আর গ্রামের রাস্তায় ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে, গ্রাম ও শহরের পার্থক্য কমে যাবে। ফলে গ্রামের রাস্তায় ভারি যানবাহন চলতে পারে এখন থেকে সেভাবে নির্মাণ করতে হবে। এখন থেকে গ্রামীণ রাস্তা অনেক বেশি মজবুত করে তৈরি করতে হবে; যাতে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছানো যায়।
একনেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ‘যশোর বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দর, রাজশাহীর রানওয়ে সারফেসে এ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ’ প্রকল্প ৫৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা তুলে ধরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, রানওয়ে উন্নয়নের প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এসব বিমানবন্দরের ব্যবহার যেহেতু বাড়ছে এবং রাতে বিমান ওঠানামা যাতে করতে পারে এজন্য যে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা সেটা করতে হবে। বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, তাদের এই পরিকল্পনা আছে। তারা রানওয়ের উন্নয়নের পরে এ কাজ শুরু করতে পারবেন। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, এ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হচ্ছে, বিমানবন্দরগুলোর ব্যবহার যেহেতু বৃদ্ধি পাচ্ছে, ইকোনমিক জোন হচ্ছে, অন্যান্য কার্যক্রম হচ্ছে, সেহেতু বিমানবন্দরগুলোর যথাযথ উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন। যেহেতু বিমানবন্দরগুলোর ব্যবহার বাড়ছে সেহেতু এগুলো সবসময় সংস্কারের মধ্যেই রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পের আওতায় যশোরে ২৮০, সৈয়দপুর ২১০ ও শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ২৭০ মিলিমিটার পুরুত্বে এ্যাসফল্ট কংক্রিট ওভারলেকরণ করা হবে। বিমানবন্দরগুলোর এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং (এজিএল) সিস্টেমের আপগ্রেডেশন, রানওয়ে সাইড-স্ট্রিপসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি বিমানবন্দরের জন্য পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি করে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক গাড়ি কেনা হবে। জানা গেছে, যশোর, সৈয়দপুর ও শাহ মখদুম বিমানবন্দর অনেক পুরনো। ফলে রানওয়ের উপরিভাগের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ু শেষ হয়ে গেছে। রানওয়ে সারফেস থেকে নুড়ি পাথর উঠে আসাসহ ডিপ্রেশন আন্ডুলেশনসহ ক্র্যাক সৃষ্টি হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলো অধিক সংখ্যক প্লেনের ওঠানামার উপযোগী করে নির্মিত নয়। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি নির্বাচন করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সমানতালে বেড়ে চলেছে যাত্রী সংখ্যা। এসব বিবেচনায় যাত্রীবাহী প্লেনের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে নির্মাণের পর থেকে সুদীর্ঘ তিন দশকে রানওয়ের উপরিভাগের বিটুমিনাস কার্পেটিংয়ের আয়ু শেষ হয়েছে। এসব কারণেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। যশোর বিমানবন্দরের চাহিদা বেড়েই চলেছে। গড়ে প্রতিদিন আট থেকে নয়টি যাত্রীবাহী প্লেন ওঠানামা করে। ৮ হাজার ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ের বিটুমিনাস কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গড়ে দৈনিক ১৫টি প্লেন চলাচল করে। বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৮০০ ফুট ও প্রস্থ ১২০ ফুট। কয়েক বছর আগে রানওয়ের সারফেস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৬০০ ফুট, প্রস্থ ১২০ ফুট। এ বিমানবন্দরে দিনে চারটি প্লেন চলাচল করলেও ঝুঁকি রয়েছে। মেরামতের মাধ্যমে রানওয়েকে সচল রাখা হয়।
এছাড়া ৩০১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কদমরসুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্পটি অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে সেন্টার করা হবে, সেটা যেন পানিকে দূষিত না করে। পানি রাখার জায়গা যেন জলাশয়ের পাশে না করা হয়। দেখা যাচ্ছে, একপাশে সুপেয় পানির জায়গা, অন্যপাশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পানি। পাখি বা অন্য কিছু পানি নষ্ট করে ফেলছে। সেটা যেন না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পানির উৎসের কাছে ল্যান্ডফিল করা যাবে না। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি নির্দেশনা তুলে ধরে সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খাদ্য উৎপাদন ও নিরাপত্তার বিষয়টায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সেই অনুযায়ী, কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ভূগর্ভের পানির ব্যবহার কমাতে হবে। নদীর পানি, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সভায় আরও অনুমোদন দেয়া প্রকল্প হলো-মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৯ কোটি টাকা। আর ভূ’পরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
একনেক সভায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।