স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে আখালিয়া নেহারীপাড়ার রায়হান উদ্দিন আহমদ (৩৪) হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গতকাল দুপুরে নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ কিছু আলামত পেয়েছে এই তদন্ত সংস্থা। তদন্তের স্বার্থে রায়হানের লাশ কবর থেকে তোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পিবিআই গতকাল বিকেলে রায়হানের বাড়ি পরিদর্শন করেছে। সেখানে রায়হানের পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের কল লিস্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এদিকে, এই ঘটনায় উত্তাল সিলেট। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। রায়হান হত্যার বিচার দাবি করছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান মামলার আলামত সংগ্রহ করেন।
এ সময় তিনি জানান, পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য নিহত রায়হান আহমদের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। রায়হান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই বাতেন পুন: রায় ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন এ আদেশ দেন। পুলিশ সুপার (পিবিআই) মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান আরও জানান, পূর্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাতেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক অনুমতি প্রদান করে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে খুব শীঘ্রই রায়হানের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হতে পারে।
এসপি মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান বলেন, ফাঁড়িটি প্রাথমিক পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে কিছু আলামত মিলেছে। তদন্তকালে এ ঘটনায় যাদের জড়িত পাওয়া যাবে মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পিবিআই এর এসপি খালেদুজ্জামানের নেতৃত্বে তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মহিদুল ইসলামসহ পিবিআই এর একটি দল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে উপস্থিত হয়ে মামলার আলামত সংগ্রহ করে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত সারে ৯ টায় মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে পিবিআই’তে মামলাটি হস্তান্তরের পর গতকাল বুধবার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে অভিযানের মধ্য দিয়ে তারা তদন্তেরর কাজ শুরু করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত রবিবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন। ৬টা ৪০ মিনিটের সময় গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। মারা যাওয়ার পর রায়হানের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার হাতের নখও উপড়ানো ছিল। এ ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন করে রায়হানকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠে। রায়হানের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বহীনতার দায়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ ৪ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। ময়না তদন্ত শেষে গত রবিবার বাদ এশা নগরীর আখালিয়া জামে মসজিদে নামাজের জানাযা হয় রায়হান উদ্দিনের। পরে আখালিয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রায়হান উদ্দিনের লাশের পুন:ময়না তদন্তের আবেদন জানানো হয়। গতকাল বুধবার আদালত পুন:ময়না তদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে উত্তোলনের অনুমতি দেন।
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার পুন:ময়না তদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়হানের মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ লাশ উত্তোলনের আবেদন করে।