দি ম্যান এন্ড কোম্পানির লিমিটেডের সংবাদ সম্মেলন ॥ ফারুক আহমদ মিছবাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অসচ্ছতার অভিযোগ

12
নগরীর গার্ডেন টাওয়ারে দি ম্যান এন্ড কোম্পানী লিমিটেড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন কোম্পানীর চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের দি ম্যান এন্ড কোম্পানির লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমদ মিছবাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অসচ্ছতার অভিযোগ করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান এম এ মোক্তাদির। গতকাল সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে নগরীর মেন্দিবাগের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কার্যক্রমে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অসচ্ছতাসহ আরো নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার পুত্র নওশাদ আল মোক্তাদির।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজের মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণ উত্তরাধিকার সনদসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিলেও তাদেরকে শেয়ার হোল্ডার হিসাবে নিবন্ধন করা হয়নি। ফারুক আহমদ মিছবাহ বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত বা অন্যান্য পরিচালকের মতামতকে কোন গুরুত্বই দেন না। কার্য নির্বাহী কমিটি বার বার সভা আহ্বান করলেও তিনি এসব সভায় উপস্থিত থাকেন না।
মোক্তাদির বলেন, ফারুক আহমদ মিছবাহর পরামর্শে কোম্পানি শাহ ডেভলপার কোম্পানিতে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভেজাল জমি ক্রয় করা হয়। এ জমি ক্রয়ে ১২ কোটি টাকা উত্তোলন করলেও মোটা অংকের টাকা নিজের কাছে রেখে দেন। এর মধ্যে কোম্পানির বিনিয়োগকৃত ১ কোটি টাকার কোন হিসাব প্রদান করেন নি। মিছবাহ নিজে শাহ ডেভলপার কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। গার্ডেন টাওয়ার ও ¯প্রীং গার্ডেনের ফ্ল্যাট মালিকরা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করলেও তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে গড়িমশি ও জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছেন। সার্ভিস চার্জ দিয়ে দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানিকে রক্ষনাবেক্ষন ও ভাড়া আদায়ের দায়িত্ব দিলেও তিনি ভাড়ার টাকা আদায় করে নিজের কাজে খরচ করেছেন। এছাড়াও গত ১০ বছরে কোম্পানির কোন এজিএম বা ইজিএম হয়নি। যার দায়িত্ব ছিল মিছবাহর। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে তিনি দি ম্যান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের কোন হালনাগাদ তথ্য ও প্রদান করেননি। তিনি ভুয়া অডিট রিপোর্ট ও বিভিন্ন সময়ে এজিএম বা ইজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একসাথে ১০ বছরের রিটার্ণ দাখিলের চেষ্টা করেছিলেন এ বছর। এ কারণে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারগণ গত মার্চের ১৫ তারিখে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছিলেন। তিনি বেআইনীভাবে এবি ব্যাংক গার্ডেন টাওয়ার শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে মামলা দায়ের হয়েছে এবং এর বিচার চলছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসাবে আমি ১৪ জুলাই নোটিশের মাধ্যমে ৫ আগষ্ট কোম্পানির ইজিএম আহ্বান করলে মিছবাহ হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসেন, এরপর তা প্রত্যাহারও করেন।
তিনি বলেন, মিছবাহর এসব কর্মকান্ডে কোম্পানির ২ জন পরিচালক গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় দি ম্যান এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের নথি তলব, সম্পত্তি বিক্রি ও শেয়ার হস্তান্তরে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। মিছবাহ তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কোম্পানির বিভিন্ন পরিচালকের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করছেন, জিডি করাচ্ছেন। কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এনামুল হক সরদারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি ১৫ বছর এই কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে ২০১৮ সালে অব্যাহতি নিয়েছেন। এনামুল হক সরদার ২০১০ সাল থেকে কোম্পানির ৫ নম্বর টাওয়ার ভাড়া নিয়ে তিনি কলেজ পরিচালনা করছেন ও নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু গত ২ বছর কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী পানি সরবরাহ না করায় এবং অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল দেয়ায় কলেজের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি তিনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিছবাহর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সমস্যাটির সমাধান হয়নি।
আব্দুল মুক্তাদির আরও বলেন, মিছবাহর কাছে কোম্পানির মোট দেড় কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তাছাড়া সিটিসেল কোম্পানির সাথে ৬০ লাখ টাকা রফাদফার বিষয়ে কোন সঠিক জবাব এখনো দেননি ফারুক আহমদ মিছবাহ। এনামুল হক সরদারসহ আমরা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডাররা কোম্পানির কাছে ২ কোটি টাকা পাই। হিসাব চাইলে মিছবাহ সুষ্ঠু হিসাব দেননি হত্যাদি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ্য করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ।
উল্লেখ্য, দি ম্যান এন্ড কোম্পানী লিমিটেড সিলেটের আবাসন খাতের একটি পথ প্রদর্শক কোম্পানী। ১৯৯৭ সালে এই কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়।