কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও নারী নির্যাতন তথা ধর্ষণের প্রাবল্য ও আধিক্য বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষণ-খুন-নারী নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা। বাদ যাচ্ছে না পারিবারিক সহিংসতাও, যার প্রধান শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক নববধূকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত। এর রেশ শেষ না হতেই নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘটে এক নারীকে বিবস্ত্র ও নির্যাতন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ন্যক্কারজনক ঘটনা। এই ঘটনাটি ছাড়িয়ে যায় মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও। একই সঙ্গে রয়েছে রাজশাহীতে গির্জায় যাজক কর্তৃক কিশোরীকে, কুষ্টিয়ায় মাদ্রাসার সুপার র্কর্তৃক শিক্ষার্থীকে এবং লালমনিরহাটে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের খবর। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া নারী নির্যাতন ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে দেশ। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-মানববন্ধনে রাজধানীসহ অন্তত ৩৫টি জেলায় এর সংক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে তথ্যপ্রযুক্তির অব্যবহার এবং থানা-পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও। বেগমগঞ্জের ভাগ্যবিড়ম্বিত নারীকে প্রধান আসামি কর্তৃক এর আগেও একাধিকবার ধর্ষণ এবং সে সম্পর্কে ইউপি মেম্বারকে জানিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি। স্থানীয় পুলিশও এগিয়ে আসেনি, যে জন্য কৈফিয়ত তলব করেছে হাইকোর্ট। অভিযোগ আছে সংঘবদ্ধ নারী নিপীড়নের পেছনে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতির মদদ রয়েছে। ফলে নিপীড়িত-নির্যাতিতরা অনেকেই মুখ খোলেন না সহজে। আর যখন তা বেরিয়ে আসে তখন সেটি গণবিক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আলোড়ন সৃষ্টি করে সমাজে ও রাষ্ট্রে।
নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নসহ দেশে যথেষ্ট ভাল আইন রয়েছে। ধর্ষকদের ফাঁসি অথবা ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবিও উঠেছে। তবে বিস্তৃত পরিসরে এর প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। অবশ্য এর জন্য নিম্ন আদালতসহ থানা-পুলিশও কম দায়ী নয় কোন অংশে। সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আছে বিস্তর। বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর অভিগম্যতা সীমিত। সরকার ও আদালত নারীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে আন্তরিক ও সচেষ্ট হবে বলেই প্রত্যাশা।