কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের সংরক্ষিত এলাকা থেকে লক্ষাধিক টাকার মাল চুরি

7

কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সংরক্ষিত এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার খুলে লক্ষাধিক টাকার তামার তার চুরি হয়েছে।
গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ঘটনাটি ঘটেলেও বিদ্যুৎ বিভাগ ৫জনকে আসামী করে রোববার(২০ সেপ্টেম্বর) রাতে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংরক্ষিত এলাকায় সবসময় প্রহরী, নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কন্ট্রোল ম্যান ও সিসি ক্যামেরা থাকার পরও বার বার চুরির ঘটনা ঘটায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ছাড়া কিভাবে এধরনের সংরক্ষিত এলাকার চুরি হচ্ছে।
পিডিবি’র দায়েরকৃত মামলার সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সংরক্ষিত এলাকার সীমানা প্রাচীর নিচের মাটি খুঁড়ে গত শুক্রবার রাতে ১০০ কেভি এর একটি ট্রান্সফরমার খুলে এর ভিতর থাকা তামার তার চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। যার আনুমানিক মূল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ওই রাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কন্ট্রোল ম্যানের (এসবিএ) দায়িত্বে ছিলেন শহিদুল আনোয়ার ও ওই এলাকার প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন মো. রাসেল মিয়া। এছাড়াও বিদ্যুত অফিসের ওই এলাকা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতাভূক্ত।
এছাড়া ২০১৯ সালের শেষে ওই এলাকা থেকে এক মাসের ভিতর পাঁচবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। সে সময়ও কয়েক লক্ষাধিক টাকার বৈদ্যুতিক তারসহ মূল্যবান বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ চুরি হয়। সেই ঘটনায়ও পিডিবি কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়ের করলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশ চুরিতে জড়িত থাকায় বিদ্যুৎ অফিসের স্টোর কিপার ও নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে। কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ পুরোটা সংরক্ষিত এলাকা থাকা পরও বার বার চুরির ঘটনায় এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
কুলাউড়া পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব চুরির ঘটনায় পিডিবির কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে একটি চক্র বিদ্যুৎ অফিসের সংরক্ষিত এলাকা থেকে একাধিকবার চুরি করছে। কোটি কোটি টাকার মূল্যবান বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ রয়েছে ওই এলাকায়। উক্ত এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অপকর্ম ঢাকতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দূর্বলতার অজুহাত দার করছে পিডিবির কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার রাতে দায়িত্বে থাকা প্রহরীর মো. রাসেল মিয়া জানান, ট্রান্সফরমারটি যেখানে ছিলো ওই জায়গাটিতে ঝোপঝাড় রয়েছে। সেখানে বাতি না থাকায় অন্ধকারে কিছু দেখা যায়না। আর ট্রান্সফরমারটি অকেজো ছিলো। দীর্ঘদিন থেকে ওই স্থানে বাতি স্থাপন ও ঝোপঝাড় পরিস্কারের জন্য বললেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দেয় নি।
ওই রাতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কন্ট্রোল ম্যানের দায়িত্বে থাকা শহিদুল আনোয়ার বলেন, আমি ওই সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভিতর দায়িত্ব পালন করছিলাম। বাহিরে কি ঘটছে এটা আমার জানার বিষয় না। যে জায়গাটিতে ট্রান্সফরমার ছিলো সেটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একশ গজ দূরে আর জায়গাটি জঙ্গল পরিপূর্ণ সেখানে কোন বৈদ্যুতিক বাতি ছিলোনা। এর আগে বিদ্যুত অফিস থেকে এক মাসে ৫ বার চুরির ঘটনা ঘটেছে।
কুলাউড়া থানার এস আই ও ওই চুরির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সনক কান্তি দাশ বলেন, চুরির ঘটনায় কুলাউড়া বিদ্যুত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও বিদ্যুত অফিসে তার ও মূল্যবান বৈদুতিক যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় পিডিবির কর্মচারী দুজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছিল।
বার বার সংরক্ষিত এলাকায় চুরির বিষয়ে জানতে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই আরেফিন এর মোবাইলে অনেকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পিডিবি’র একটি সূত্র জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেকে সরকারি দলের কর্মকর্তাদের সংগঠনের একজন বড় নেতা পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে এখন বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। আর তার দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির দায় নিতে হচ্ছে পিডিবি ও এলাকাবাসীকে। অচিরে এ কর্মকর্তা ও তার সিন্ডিকেটের অনিয়মগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হলে অনেক অপকর্মের চিত্র প্রকাশিত হবে। সরকার কোন দুর্নীতিবাজ চক্রের দায় নিবে না।