কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতিসংঘের ৭৫তম চলমান অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্কে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগে থেকে ধারণকৃত এ বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকট ও সাশ্রয়ী মূল্যে করোনার ভ্যাকসিন কীভাবে বিশ্বব্যাপী সবার জন্য নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে কথা বলবেন।
পাশাপাশি জলবায়ূর পরিবর্তন, প্রযুক্তির আদান-প্রদান, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়েও বক্তব্য দেবেন তিনি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানান। ভার্চুয়ালি আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সংযুক্ত ছিলেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে। এ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব আজ ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপের কারণে এবারের অধিবেশন আগের বছরগুলো থেকে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধিমালা অনুসরণ করে জাতিসংঘের ইতিহাসে এ প্রথম ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ দেশ থেকে এবারের সভায় অংশগ্রহণ করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সাধারণে অধিবেশনের মূল বিতর্ক ছাড়াও আরও কয়েকটি শীর্ষ পর্যায়ের সভায়ও ধারণকৃত বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তার মধ্যে মঙ্গলবার ভোর ৪টায় (বাংলাদেশ সময়) প্রথম বক্তব্যটি প্রচারিত হবে। উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি ওইদিন (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় প্রচারিত হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক বছরের মতো এবারও অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যাটি তুলে ধরবেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে আইসিজেতে চলমান মামলা এবং আইসিসিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা আগের বছরগুলোর মতোই গুরুত্বসহকারে আলোচিত হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা। বক্তৃতায় স্বাভাবিকভাবেই কোভিড-১৯ দমনে বিশ্ববাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার আবশ্যকতা, ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত ও দুর্দশা দমনে আমাদের গৃহিত কার্যক্রম প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তির আদান প্রদান, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ, লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ, শিশু স্বাস্থ্য ও তাদের অধিকার, শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ এবং নারীর ক্ষমতায়ণের মতো বিষয়গুলো উঠে আসবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ অধিবেশনের সাধারন বিতর্ক পর্বের পাশাপাশি গুরুত্বপূণৃ শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি সভায় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী কাল বুধবার জাতিসংঘ আয়োজিত ডিজিটাল কোঅপারেশন: অ্যাকশন টুডে ফর ফিউচার জেনারেশন শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে আগামী ২৪ সেপ্টম্বর অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। এ সভায় অংশগ্রহণ করে ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) এর সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে প্রতিশ্র“ত তহবিল প্রদান ও জলবায়ু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের মত বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরও জানান, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সভায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোভিড-১৯ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, সরকারি অর্থের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অর্থায়ন এবং অভিবাসী ও রেমিট্যান্স বিষয়ে জোরালো দাবী উত্থাপন করবেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জীববৈচিত্র সংক্রান্ত সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে প্রধানমন্ত্রী জীব বৈচিত্র্যের হুমকির কারণসমূহ এবং এ হুমকি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাবেন। এছাড়া পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বেইজিং+২৫ শীর্ষক সভায় প্রধানমন্ত্রী নারী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ণ ও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে আমাদের অভাবনীয় সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরবেন।
জাতিসংঘ অধিবেশনের কয়েকটি সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণ করবেন।