সুনামগঞ্জে বাঁধ দুর্নীতির মামলা ॥ ৩ বছর পর ৪ জনের সাক্ষী নিল দুদক

7

সুনামগঞ্জের হাওরে ২০১৭ সালে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছিল। একটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যটি জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দায়ের করেছিলেন সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হক। প্রায় তিন বছর আইনজীবী সমিতির দায়ের করা মামলার বাদী ও তিন সাক্ষীর বক্তব্য নিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। হাওর বিপর্যয়ের এই ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। এরপর হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে দুটি মামলা হয়।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতিতে গিয়ে দুদকের সিলেট কার্যালয়ের দুজন কর্মকর্তা মামলার বাদী আবদুল হক এবং তিনজন সাক্ষীর বক্তব্য নেন। সাক্ষীদের মধ্যে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর এবং সুনামগঞ্জে হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন তালুকদার কথা বলেন।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমদ ওই বছরের ২ জুলাই বাদী হয়ে ৬১ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আসামির তালিকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫ প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা এবং ৪১ জন ঠিকাদার ছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে মামলার এজাহারে থাকা ৩৪ জনকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন করে যুক্ত করা হয় ছয়জনকে। এরপর অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত এখনো অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি।
আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট একই অভিযোগে সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা হয়। মামলায় আসামি করা হয় ১৩৯ জনকে। এর মধ্যে দুদকের মামলার ৬১ জন আসামিও আছেন। এর বাইরে ৭৮ জন হলেন ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানোর আদেশ দেন। এই মামলায় বুধবার প্রথম বাদী ও তিনজন সাক্ষীর বক্তব্য নেওয়া হলো।
আইনজীবী সমিতির মামলার বাদী আবদুল হক বলেন, ‘আমাদের মামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদার এবং পিআইসির লোকজন আসামি আছেন। আমাদের আবেদন হচ্ছে দুদকের মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে দুটি মামলা একীভূত করে পুনরায় তদন্ত হোক। আমার চাই প্রকৃত দোষীরা যেন ছাড় না পান।’
জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. আপ্তাব উদ্দিন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে হাওরে ২০১৭ সালে ফসলহানির কারণে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল এর আগে হাওরে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। দুদকের মামলার অভিযোগপত্রে অনেক বড় বড় ঠিকাদারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, এই বিপর্যয়ের জন্য যারাই দায়ী ছিলেন তাদের প্রত্যেকের যেন শাস্তি হয়।’
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলেছি, হাওরে ওই সময় বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির কারণেই ফসলহানি ঘটে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন জড়িত ছিলেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হলেই বিষয়টি প্রমাণিত হবে।’
দুদকের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন আইনজীবী সমিতির দায়ের করা মামলার তদন্তের প্রয়োজনে বাদী ও তিনজন সাক্ষীর বক্তব্য গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর বেশি তিনি কোনো কিছু বলতে চাননি।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ওই সময় হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। কৃষকেরা কোনো ফসল গোলায় তুলতে পারেননি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। (খবর সংবাদদাতার)