কমলগঞ্জে দলই চা বাগান চালু ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

13
কমলগঞ্জে বেআইনী ও উস্কানিমূলক নোটিশ প্রত্যাহার সহ দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা নি:শর্ত প্রত্যাহার করে দলই চা বাগান চালুর দাবিতে বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
কমলগঞ্জ উপজেলার দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন শ্রমিকরা। একইসাথে দলই চা বাগানে নিয়মিত কার্যক্রম চালুর দাবিও জানান তারা। এ সময় চা শ্রমিকরা বাগান থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ লংমার্চ করে দেড়ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে। সোমবার (২৪ আগষ্ট) সকাল ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ কি.মি. দূরে দলই চা বাগান শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে মিছিল সহযোগে দুপুরের পর কমলগঞ্জ উপজেলায় চৌমুহনী পৌঁছায়। উপজেলা চৌমুহনী নারী শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানুর নেতৃত্বে তিন শতাধিক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। দেড়ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর তারা উপজেলা প্রশাসনের সম্মুখে অবস্থান নেয়।
নারী চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানুসহ দলই চা বাগান শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে দলই চা বাগান মালিক পক্ষ শ্রমিকদের হয়রানি করতে চায়। চা বাগান কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে গত ২৭ জুলাই বাগান বন্ধ করেছে। এটি কোনমতেই কাম্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগান শ্রমিকরা অনাহার, অর্ধাহারে দিনযাপনের অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দলই চা বাগান চালুর দাবি জানান।এদিকে গত ২৮ দিন যাবত কমলগঞ্জের দলই চা-বাগান বন্ধ। এরই ভেতর দুই নারী শ্রমিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ নিয়ে থানায় যান চা-শ্রমিকরা। কিন্তু কমলগঞ্জ থানা কর্তৃপক্ষ মামলাটি নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে দলই চা-বাগান কর্তৃপক্ষের মামলা নিয়েছে পুলিশ। দলই চা বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক সেতু রায় বলেন, ‘এজিএম কর্তৃক দুই নারী চা-শ্রমিক লাঞ্ছিত হয় গত ১৯ আগষ্ট। আমরা মামলা দিতে যাই। কিন্তু, মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো পুলিশ বলেছে আমরা কারো মামলা নেবো না। এই বলে আমাদের ফেরত পাঠিয়েছে। অথচ শনিবার রাতে শুনলাম চা-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’ মামলার আসামি চা-শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে দলই চা-বাগানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ মামলার বাদী খালেদ মঞ্জুর খান বাগানের দুই নারী চা-শ্রমিককে লাঞ্ছিত করায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল মেরে জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে। এর চেয়ে বেশি কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন যাতে অনাহারে থাকা চা-শ্রমিকদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দিতে হয়, সেজন্য ঘটনার দুই দিন পর পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজিয়েছেন। অথচ ঘটনার পর লাঞ্ছিত নারী চা-শ্রমিকরা কমলগঞ্জ থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা সে অভিযোগ গ্রহণ করেনি।’তবে কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলামকে।’ শ্রমিকদের মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে ওসি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা। তারা অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’
উল্লেখ্য, দলই চা বাগান বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগষ্ট বাগান চালু নিয়ে ম্যানেজমেন্টের সাথে শ্রমিকদের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জন চা শ্রমিকের নামে মারপিট, গাড়ি ভাঙচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় মামলা করেন দলই চা বাগান কোম্পানির এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান। মামলার প্রতিবাদে ও বাগান বন্ধের প্রতিবাদে দলই চা বাগান শ্রমিকরা সোমবার বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে।