হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের অবহেলায় এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। মারা যাওয়া ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা এমন অভিযোগ তুলেছেন।
কলেজ ছাত্রের নাম রনি আচার্য্য (২৪) গত ২৭ জুলাই বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি বানিয়াচং ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের জাতুকর্ণ পাড়া মহল্লার শংকর আচার্য্যরে পুত্র ও হবিগঞ্জ সরকারি কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্র। দুই ভাই বোনের মধ্যে রনি ছিলেন পরিবারের বড়। তার বোন আখি আচার্য্য স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
চিকিৎসকের অবহেলায় রনির মৃত্যু হয়েছে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মাসুদ রানার নিকট এমনটি লিখিত অভিযোগ করেছেন রনি আচার্য্যরে মা অর্পণা রাণী আচার্য্য। সোমবার (১০ আগষ্ট) সকাল ১১টায় দিকে এই লিখিত অভিযোগ জমা দেন তিনি।
রনির পারিবারিক সূত্রে জানা যায, গত মাসের ২৭ তারিখ রনি আচার্য্যরে হঠাৎ করে পেঠে ব্যথা শুরু হলে পরিবারের সদস্য (চাচাতো ভাই) জনি আচার্য্য তাকে চিকিৎসার জন্য বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডা. ইবনে সিনা ইকরাম রোগীর মুখে মাস্ক পরিহিত না থাকায় তাকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে জনি আচার্য্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে থাকা একটি মাস্ক কিনে নিয়ে আসার পর তার চিকিৎসা শুরু করেন। তাকে ভর্তি না দিয়ে পরে ডা: ইবনে সিনা ইকরাম পেটে ব্যথা হয়েছে জেনে কয়েকটা সাপোজিটরি লিখে দিয়ে বিদায় করে দেন। এমতাবস্থায় জনি তার ভাই রনি আচার্য্যকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। দুপুরের দিকে পেঠের ব্যথা আবার শুরু হলে পুনরায় তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ব্যথায় চটপট করতে শুরু করেন রনি আচার্য্য। পরবর্তীতে জরুরি বিভাগে সহাকারি সার্জন ডা: জাহানারা আক্তার বেলা সাড়ে তিনটায় রণির হার্ট ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা আছে দেখে তাকে পুরুষ ওয়ার্ডের ১০নাম্বার বেডে ভর্তি দেন। এরই ফাঁকে রনির অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। পরে রণিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডা: জাহানারা আক্তার। ইতিমধ্যে রোগীর স্বজনরা সিলেট নেয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতে গেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে রনি আচার্য্য। পরে রোগীর স্বজনদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মর্মে ডেট সার্টিফিকেট প্রদান করেন সহকারি সার্জন ডা: জাহানারা আক্তার।
খবর পেয়ে রোগীর আত্মীয়স্বজনরা ছুটে এসে কান্নাকাটি শুরু করলে টিএইও ডা: শাহ পরাণ থানায় ফোন করে পুলিশকে আসতে বলেন।
নিহত রনির মা অর্পনা রাণী আচার্য্য সাংবাদিকদের জানান,আমার ছেলেকে পেটের ব্যথা ছিল বলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ঠিক মতো চিকিৎসা দেয়ার আমার ছেলে মারা যায়। পরবর্তীতে হার্টে সমস্যা থাকায় মারা গেছে বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়।
বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার কর্মকর্তা আবুল হাদি মো: শাহ পরাণ জানান, যেহেতু ইউএনও’র বরাবরে তারা অভিযোগ দাখিল করেছে বিষয়টি তিনিই দেখবেন। তদন্ত কাজে যদি কোন ধরণের সাহায্য সহযোগীতা দরকার হয় আমি তা করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানার সাথে কথা হলে তিনি জানান, মারা গেছে গত ২৭ তারিখ। তারা অভিযোগ দিয়েছে ১০ আগষ্ট (সোমবার)। তারপরও যেহেতু অভিযোগ দেয়া হয়েছে আমরা সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।