স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে পুলিশের মোটর সাইকেলে যে বোমাসদৃশ বস্তুটি ছিল এটা আসলে বোমা নয় এ উদ্ধার হওয়া একটা লাল গ্রাইন্ডিং মেশিন। গত ২১ ঘন্টার র্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে গতকাল বিকেলে বস্তুটি উদ্ধারের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় এমনটি জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতাতিক ডিভিশনের বোমা নিস্ক্রিয়করণ দলের নেতা লে. কর্ণেল রাহাত। তিনি জানান, মোটরসাইকেলে থাকা বস্তুটি কোনো বোমা ছিল না, ছিল গ্রাইন্ডিং মেশিন (টাইলস বা রড কাটার যন্ত্রবিশেষ)।
সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ লে. কর্ণেল রাহাত আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকাল সন্ধ্যার সময় একজন পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেলে একটি অবজেক্ট, একটা সাসপেক্ট (সন্দেহজনক বস্তু) পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই অবজেক্টটা ইন্সপেকশন ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পেয়ে সিলেটে থাকা ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা নিস্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ টিম আমরা এখানে আসি। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসে আমাদের পদ্ধতি অবলম্বন করেছি, পরিদর্শন করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা গ্রাইন্ডিং মেশিন। কিন্তু অধিকতর তদন্তের জন্য এবং এখানে যাতে অন্য ধরনের সন্দেহজনক বস্তু না থাকে, এটা নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করেছি এবং আরো নিশ্চিত হতে আমরা এটাকে খুলেছি।’লে. কর্ণেল রাহাত আরো বলেন, হতে পারে ভুলবশত: অথবা হতে পারে কেউ এটা পুলিশ সদস্যের গাড়িতে রেখে একটা আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিল।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, আমরা দুই দিক থেকে চিন্তা করতে পারি। কেউ ভুলবশত: গ্রাইন্ডিং মেশিনটা এখানে রেখে যেতে পারেন। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, সরকারি গাড়ি, সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বা জনমনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির জন্য হয়তো কেউ রেখে থাকতে পারেন। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে এ নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট চয়ন নাইডু তাঁর ঢাকা মেট্রো ১৪-৯২৭০ নম্বরের কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেলটি চৌহাট্টা পয়েন্টে পুলিশ বক্সের পাশে রাখেন। তিনি পার্শ্বস্থ একটি দোকান থেকে ফিরে মোটরসাইকেলে লাল রঙের বস্তু দেখতে পান। বিষয়টি তাঁর কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি খবর দেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। পরে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে ওই মোটরসাইকেলে ঘিরে ফেলে। মুহূর্তেই চৌহাট্টা পয়েন্টে মোটরসাইকেলে বোমা রাখা হয়েছে বলে গুঞ্জন ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সিলেটজুড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) ও র্যাব-৯ এর টিমও আসে। বন্ধ করে দেওয়া হয় চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়কে যান চলাচল। শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা শুরু হয়। সিলেট মহানগর পুলিশে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট না থাকায় খবর পাঠানো হয় ঢাকায়। পুলিশের সদর দপ্তর থেকে চৌহাট্টা পয়েন্টে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ টিম পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরকে। সেনা সদর দপ্তর নির্দেশনা পাঠায় সিলেটস্থ ১৭ পদাতিক ডিভিশনকে। এ ডিভিশনের বোমা বিশেষজ্ঞ লে. কর্ণেল খালেদ, ক্যাপ্টেন নূর, ক্যাপ্টেন গালিবসহ একটি টিম বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে। শুরু হয় তাঁদের অভিযান। সেই সফল অভিযানে বোমাসদৃশ বস্তুটি উদ্ধার করা হয়। জানা যায় সেটি আসলে বোমা নয়, গ্রাইন্ডিং মেশিন।