হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
চাচাতো ভাই খুনের মামলায় সাক্ষী হওয়ায় ও মামলা পরিচালনা করার কারণেই মূলত হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বড়উড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
এ সময় বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শেখ সেলিমসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, ২০১৭ সালের নিহত কামাল মিয়ার চাচাতো ভাই ইসলাম উদ্দিন খুন হন। এ খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বলা হয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তার অনুসারিরা হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। নিহত কামাল মিয়া ওই মামলায় সাক্ষী ও মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মূলত এ বিষয় নিয়েই কামাল মিয়ার সাথে ইউপি চেয়ারমম্যান হাবিবুর রহমানের বিরোধ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি এ বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান কামাল মিয়াকে খুনের পরিকল্পনা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার ইউপি চেয়ারম্যমান তার সহযোগিদের নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে কামাল মিয়াকে খুনের নকশা আঁকেন। এমনকি কে হত্যাকান্ডে অংশ নেবে আর কে পাহারা দেবে সে দিকনির্দেশনাও চেয়ারম্যান নিজেই দেন।
ঘটনার দিন (২২ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ২০ মিনিটে শিবগঞ্জ বাজারের পাশে অবস্থিত প্রফেসর ডা. এমএ খালেক স্মৃতি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সামনে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের নির্দেশে রফিক, ফরিদ, জুনেদ, রুমেল, এবাদুর, সাইফুল বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে কামালের পথরোধ করে এবং তাকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করে ফরিদ, মধু মিয়া, পাভেল, আবিদ মিয়াসহ কয়েকজন। কামাল মিয়াকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, কামাল মিয়াকে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছিল। তার শরীরে ৩০/৩৩টি জখম করা হয়। এ ঘটনায় কামাল মিয়ার স্ত্রী রাজনা আক্তার বাদি হয়ে গত ২৫ জুলাই ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানসহ ১৫ আসামিকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় আটককৃতরা হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
নিহত কামাল মিয়া বানিয়াচং উপজেলার হলদারপুর গ্রামের মৃত মন্নাফ মিয়ার ছেলে। তিনি বড়ইউরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।