কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান বন্যা শেষে সময়মতো কার্যকর পুনর্বাসন কর্মসূচী নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পুনর্বাসন কর্মসূচী যথাযথ হতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মানুষ যেন প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা পায়। এছাড়া বিগত দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা যে অধ্যাদেশগুলো এখনও আইনে পরিণত হয়নি, সেগুলোকে আইনে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে আগামী ৩ মাস সময় দেয়া হয়েছে। সোমবার ভার্চুয়াল মন্ত্রী সভা বৈঠকে এই নির্দেশ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্ধারিত বিষয়ে বন্যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমরা কিভাবে তা মোকাবেলা করব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এজন্য মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি রয়েছে। তারপরও একটা অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া হচ্ছে, বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া আছে, কারণ হলো- একটা উদ্বেগ আছে যে পানি নামতে একটু দেরি হতে পারে। যদিও এখন পানি নেমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেডিকশন আছে যে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যপট আছে তাতে বঙ্গোপসাগরসহ কতগুলো সাগরের কথা বলেছে, সেখানে পানির উচ্চতা এই সময়টাতে বেড়ে যাচ্ছে। সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে পানি নামার ফ্লো কমে যাবে। ভাদ্র মাসের প্রথম থেকে হয়তো একটু বেশি সময় পানি জমা হয়ে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিষ্কার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন, যত রকমের সাহায্য সহযোগিতা মানুষের দরকার সব করতে হবে। কোভিডের এই সময় যেহেতু বন্যা তাই একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ে যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেন তারা অবশ্যই সেখানে থাকবেন।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পুনর্বাসন প্রোগ্রামগুলো যেন খুব ভালো হয়, খুব কার্যকর হয়, সময়মতো হয়- সেটার বিষয় মন্ত্রী সভা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জোর দিতে বলেছেন। বন্যায় আমনের ক্ষতি হলেও পলির কারণে বন্যার পরের সুফলটা নিতে কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের নির্দেশনা দেয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, উঁচু এলাকায় আমনের ফলন ভাল হবে বলে মনে হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী এটা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে নির্দেশনা দিয়েছেন, রোপা আমনে যেন আমরা খুব এ্যাটেনটিভ থাকি। এর পুরো সুযোগটা যদি আমরা নিতে পারি তবে বোরোতে যে বাম্পার ফলন হয়ে গেছে, আশা করা যাচ্ছে আমন ও রোপা আমন মিলে আমাদের উৎপাদন ভাল হলে সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটা বড় হাতিয়ার হবে। খাদ্যদ্রব্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ আছি।
যেখানে যেখানে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র পর্যাপ্ত নয় সেখানে আমি নিজে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেও দিয়েছেন ওই এলাকাতে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় লোকজন আশ্রয় নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বিশেষ করে করে গরু বাছুরকে যে ভ্যাকসিন দেয়ার সেগুলো যেন সব রেগুলার দেয়া হয়। এগুলো অলরেডি সুপারভিশন করা হচ্ছে, ইন্সট্রাকশন দেয়া হচ্ছে।
কোভিডের কারণে ত্রাণ সরবরাহের জন্য সরকারের প্রস্তুতি ছিল জানিয়ে খন্দকার আনোয়ার বলেন, সবকিছু ওপেন করে দেয়ায় ত্রাণের চাহিদা কমে গেছে। ভাল একটা রিলিফ আমাদের কাছে মজুত আছে। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বন্যায় ৩১ জেলার প্রায় ৪০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিগত দুটি সামরিক শাসনামলে জারি করা যে অধ্যাদেশগুলো এখনও আইনে পরিণত হয়নি, সেগুলোকে আইনে পরিণত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে আগামী ৩ মাস সময় দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রী সভার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসছে সেটা হলো, যতগুলো অধ্যাদেশ আছে যেগুলোকে আইনে পরিণত করতে হবে বলে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল। এটা তিন মাসের মধ্যে এগুলো ফাইনাল করে নিতে হবে। আইনমন্ত্রী মহোদয়ও এই বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আগামী তিন মাস আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে এটি ফাইনাল করে ফেলতে হবে।