করোনা সংক্রমণে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত। জীবনের সব ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে। প্রচুর লোক কর্মহীন। শিল্পে মন্দা, ব্যবসায় ভাটা। কারখানাগুলোতে গণছাঁটাই চলছে। বেসরকারি খাতের প্রায় সব চাকরিজীবীর বেতন কমেছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে এই মহামারির মধ্যেও সরকারি চাকরিজীবীরা ভালো আছেন। তাঁদের খাতায় বরং আরো সুবিধা যোগ হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব কর্মকর্তাকে অফিস করতে হচ্ছে না। মোটামুটি ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা অফিসে যাচ্ছেন, তাও পালাক্রমে। বাকি ৭৫ শতাংশ ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করছেন। বেসরকারি খাতে শুরুর দিকে ৫০ শতাংশ লোককে বাড়িতে বসে কাজ করার সুবিধা দেওয়া হলেও এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে সবাইকেই হাজির হতে হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতায়ও কোনো প্রভাব নেই। অফিসে নিয়মিত না গেলেও প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গাড়ি খরচের জন্য মাসে ৫০ হাজার করে টাকা তুলছেন। এখানেও বঞ্চিত বেসরকারি খাত।
করোনাকালে বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্বের টানাপড়েনে রয়েছে। খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই চলছে। গত চার মাসে চাকরি হারিয়েছেন অনেক লোক। যাঁদের চাকরি যায়নি তাঁদের বেতন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের কারো স্বস্তিতে থাকার কথা নয়। সামনে ঈদ। কিন্তু খুশির ভাব নেই সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) কর্মীদের বেতন কাটাসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের কাছে। পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেনটিভ, বোনাস, নতুন নিয়োগ, নতুন শাখা খোলা, বিদেশভ্রমণ, প্রশিক্ষণ সব বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। অনেক বেসরকারি ব্যাংক কর্মীদের বেতন কেটে নিচ্ছে। পুরো বেসরকারি খাতেই এ অবস্থা। সরকারি খাতে কিন্তু চিন্তা নেই; বরং ২০১৫ সালের বেতনকাঠামো অনুযায়ী আগস্ট মাস থেকে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যোগ হচ্ছে। ১ আগস্ট ঈদ হলে সরকারি চাকরিজীবীরা বেশি বোনাস পাবেন। অথচ বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বোনাস হবে কি না সন্দেহ। করোনাকালে চাকরিজীবীরা ব্যাপক বৈষম্যের মধ্যে পড়েছেন। সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে গেলে পেনশন পান, ভাতা পান। বেসরকারি খাতে এ সুবিধা নেই।
সরকারি খাতের দায়িত্ব সরকারের হলেও বেসরকারি খাতের দায়িত্ব সরকারের নয়। তবে করোনাকালের শিক্ষা হলো, অন্তত দুর্যোগকালে সরকারি-বেসরকারি সব চাকরিজীবীর ব্যাপারে সরকারের তথা রাষ্ট্রের ভূমিকা থাকা উচিত। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বৈষম্য কমানো উচিত। সবার জন্য একটা নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা উচিত। ভালো হয় যদি সরকারি চাকরিজীবীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের বেতন কমানোর কথা বলে।