নবীগঞ্জে জলমহাল নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৩০

13
নবীগঞ্জে জলমহাল নিয়ে সংঘর্ষে নিহত একজন।

তোফাজ্জল হোসেন নবীগঞ্জ থেকে :
নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর (দেবপাড়া) গ্রামে গতকাল ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে বিজনা নদীর জমহাল নিয়ে পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত এক আহত ৩০ জন। সংঘর্ষের সময় জাহির আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধকে পিকল (দেশী অস্ত্র) দিয়ে একাধিক ঘাই মেরে ঘটনাস্থলেই হত্যা করেছে হামলাকারীরা বলে জানা গেছে। এ সময় গর্ভবতী মহিলা ও শিশুসহ অন্তত ৩০জন আহত হয়েছে। আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৫ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদেরকে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রধান করা হয়েছে। হামলার ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এ এসপি মোঃ পারভেজ আলম চৌধুরী, ওসি মোঃ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। ঘটনার পর থেকে গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর (দেবপাড়া) গ্রামে বিজনা নদীর জমহাল নিয়ে ওই গ্রামের বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংদের সাথে একই গ্রামের শফিক মিয়া, রয়মান মিয়া গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা ও মামলা মোকদ্দমা চলে আসছিল। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এ এসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংরা সালিশের সময় রায় মানলেও এলাকায় এসে তা অমান্য করে অতীতের ন্যায় তারা তাদের স্বঅবস্থানে ফিরে যায়। এমতাবস্থায় গত বুধবার সকালে কাচন বাড়ীর সামনে দিয়ে সিএনজি ষ্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে শফিক মিয়ার পক্ষের লতিফ মিয়া ও তার স্ত্রীকে আটক করে মারধর করে। এ খবর শফিক লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং রাতেই দাঙ্গা হাঙ্গামা এড়াতে উভয় পক্ষের ৫জনকে আটক থানার নিয়ে আসে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনার জের ধরে বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়ার লোকজন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে দেশীয় অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে শফিক পক্ষের লোকজনের বাড়ীঘরে এলোপাতারি ভাবে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। হামলাকারীদের পিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই জাহির আলী নামে (৭৫) বৃদ্ধ মারা যান। এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হল, হাফিজুন্নেছা (৩৫), ছুরুক মিয়া (৩৩), কুরুস মিয়া (৩০), জুসনা বেগম (৪০), ফয়জুর রহমান (৪০), ইছমত মিয়া (৩৫), মকবুল হোসেন (১৭), আকবর মিয়া (৩০), মস্তফা মিয়া (১৫), আবু তাহের (২৮), বিরাম উদ্দিন (৫০), রফি মিয়া (৩০), জলি বেগম (১৮), তোফাজ্জল মিয়া (২৮), আছিয়া বেগম (২৯), সুফান মিয়া (৪০),শহিদ মিয়া (৪৫), আকবর মিয়া (২৬), মিছবাহ উদ্দিন (৩০), মানিক মিয়া (৪০), সালাম মিয়া (৫০), সামসুল হক (৪৫), সজল মিয়া (৩০)। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান জানান, গ্রামের জলমহাল, মসজিদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরুধ চলে আসছিল। এ বিষয়টি নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এ এসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু তার পরে ও এ ঘটনা সংঘটিত হয়। আমরা খবর পেয়ে রাতেই উভয় পক্ষের কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে আসি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।