হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী :
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, রাতের শেষার্ধ শুরু হলে একজন ঘোষক ঘোষণা দিতে থাকেন! বান্দার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতের দরজা সব সময় খোলা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। -সূরা গাফের: ৬০।
তারপরও সবকিছুতেই যেমন বিশেষত্ব থাকে আল্লাহর নিকট প্রার্থনারও একান্ত কিছু সময় আছে। সেগুলোকে হাদিসের ভাষায় আসমানের দরজা উম্মোচনের সময় বলে অভিহিত করা হয়েছে। হাদিসের ভান্ডার থেকে এমন ৫টি সময়ের কথা জানা যায়- যখন আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য তার রমহতের দরজা খুলে দেন।
জোহরের পূর্বমুহূর্তে : হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আসমানের দুয়ারসমূহ খুলে দেওয়া হয় সূর্য মধ্যাকাশ থেকে পশ্চিমাকাশের দিকে হেলে পড়ার সময়। এরপর জোহরের নামাজ পর্যন্ত তা আর বন্ধ হয় না। -সহিহুল জামে: ১৫৩২।
অর্থাৎ ঠিক দ্বিপ্রহরের পর থেকে জোহরের নামাজ পর্যন্ত সময়কে এখানে বুঝানো হয়েছে। এ সময়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জোহরের ৪ রাকাত সুন্নত কখনও বাদ দিতেন না।
আজানের সময় : হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আজান দেওয়া হয় আসমানের দুয়ারসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল করা হয়। -সহিহুত তারগিব: ২৬০।
এখানে আজান থেকে নিয়ে জামাত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এ সময়টিকে বুঝানো হয়েছে। এ সময়ে মনের যেকোন বাসনা আল্লাহর কাছে পেশ করার জন্য আদর্শ সময়।
এক নামাজের পর যখন অন্য নামাজের জন্য মানুষ অপেক্ষা করে : হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো যে, তোমাদের রব আসমানের দুয়ার খুলে দিয়েছেন এবং তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলছেন- ‘আমার বান্দারা আমার ধার্যকৃত ফরজ আদায়ের পর আরেক ফরজের জন্য অপেক্ষা করছে।’ -ইবনে মাজা: ৮০১
রাতের শেষার্ধে : হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের শেষার্ধ শুরু হলে একজন ঘোষক ঘোষণা দিতে থাকেন, কেউ কি কোনো আর্জি পেশ করার আছো? তার আর্জি গৃহীত হবে। কারও যাঞ্চা করার কিছু আছে? তা মঞ্জুর হবে। আছে কোনো বিপদগ্রস্ত? তার বিপদ দূর করা হবে। তখন পেশাদার ব্যভিচারীনী এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজি করা লোক ব্যতিত কোনো মুসলিমের দোয়া ব্যর্থ হয় না। -তারগিব: ৭৮৬
আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়ালহামদু লিল্লাহি কাসিরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা- দোয়া পাঠের সময় : একদিন আমরা হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম। সে সময় সমাগত লোকদের থেকে এক লোক বলল, ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাসিরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা।‘
অর্থ: আল্লাহ মহান, অতি মহান, আল্লাহ তায়ালার জন্য অনেক অনেক প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই কথা কে বলেছে? উপস্থিত লোকদের মাঝে এক লোক বলল, আমি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি নবী করিম (সাঃ) বললেন, এ দোয়ায় আমি খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। এ বাক্যগুলোর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
ইবনে উমার (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আমি এ কথা শুনার পর থেকে কখনও তা পাঠ করা পরিহার করিনি। -সহিহ মুসলিম ও তিরমিজি,
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক:- সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।