স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট আওয়ামী লীগ মানে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। দলের জন্য প্রশংসিত নেতৃত্ব দিয়ে পৌঁছান শেকড় থেকে শিখরে। ছাত্র রাজনীতি থেকে শহর, নগর থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পৌঁছেছেন। তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে। সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর পৌর চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, এরপর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।
সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল কামরান মাথায় সাদা টুপি, মুখে কালো গোঁফ। কখনো চোখে সাদা চশমা পড়া লোকটি ছিলেন সিলেটের মানুষের নয়নমণি। সিলেট পাইলট স্কুলে ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি কামরানের। ছাত্রবস্থায় ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানে রাজপথ মাতিয়েছেন। এরপর সত্তোরের নির্বাচনকালীন সময়েও ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে মাঠ কাঁপিয়েছেন। দীর্ঘ ৩ দশক সিলেটের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ হারান কামরান। তবে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে নির্বাহী সদস্য করা হয় কামরানকে।
এদিকে, রাজনীতিতে যেমনটি দলের নেতাকর্মীর কাছে জনপ্রিয় ছিলেন কামরান, তেমনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান জনতার কামরান। সেই থেকে সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন তিনি। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝপথে খানিকটা বিরতি ছিল প্রবাসে যাওয়ায়। সেবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে দু’টি পাতার একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। ২০০৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তিনি।
১/১১’র সময়ে দুইবার কারাবরণ করেন কামরান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ দুটি সিটি নিবার্চনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন কামরান। আর করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে গতকাল সোমবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন সিলেটের সবার প্রিয় রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি বদর উদ্দিন কামরান। তার মৃত্যুতে সিলেটের আরেক নক্ষত্রের পতন হলো। মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিয় কামরানময় হয়ে উঠেছে। প্রিয় নেতার শোকে আজ কাতর সিলেটবাসী।