কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
গত ৯ জুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব হাসান মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এ তথ্য মিলেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাসহ চিঠিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য দেওয়া হয়েছে।
অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এই ১৪ ঠিকাদারকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে এই তালিকা পাঠায় দুদক। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এদের কালো তালিকায় নাম তোলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুদকের সুপারিশ অনুযায়ী কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও আলোচিত কেরানি আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানমের রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রূপা ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে মেডিকেল সরঞ্জাম ক্রয়সংক্রান্ত এক মামলায় পাঁচ কোটি ৯০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় করা এক মামলায় সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা সরকারি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
পুরানা পল্টনের আবদুস সাত্তার সরকার ও মো. আহসান হাবীবের মালিকানাধীন মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, তোপখানা রোডের জাহেরউদ্দিন সরকারের মালিকানাধীন বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল ও দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আসাদুর রহমানের মালিকানাধীন ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের বিরুদ্ধে দুদকের খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মামলায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয় কোটি ছয় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
জাহেরউদ্দিন সরকারের মালিকানাধীন বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যালের বিরুদ্ধে রংপুর মেডিকেল কলেজের সাড়ে চার কোটি টাকা ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নামে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে নয় কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক।
এছাড়া চট্টগ্রামে দুর্নীতির অভিযোগে মুন্সী ফররুখ হোসাইনের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ, বেঙ্গল সাইন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোং ও এর স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার এবং এএসএল ও প্রতিষ্ঠানটির এমডি আফতাব আহমেদকেও কালো তালিকাভুক্ত করতে বলেছিল দুদক।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেনাকাটায় অনিয়মের মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার মিরপুরের আবদুল্লাহ আল মামুনের মালিকানাধীন অনিক ট্রেডার্স ও মুন্সী ফররুখ হোসাইনের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা রয়েছে। এছাড়া বিনা টেন্ডারে সাড়ে নয় কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রংপুরের মনজুর আহমেদের মালিকানাধীন মেসার্স ম্যানিলা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স এসকে ট্রেডার্স, মোসাদ্দেক হোসেনের মালিকানাধীন এমএইচ ফার্মা, জয়নাল আবেদীনের মালিকানাধীন মেসার্স অভি ড্রাগস, আলমগীর হোসেনের মালিকানাধীন মেসার্স আলবিরা ফার্মেসি ও মো. মিন্টুর মালিকানাধীন এসএম ট্রেডার্সকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এছাড়া ঢাকার মোকছেদুল ইসলামের মালিকানাধীন বেয়ার এভিয়েশনের নামে ৭৫ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি ও মিথ্যা ব্যয় দেখিয়ে ৮৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দিনাজপুরে একটি মামলা রয়েছে।
এদিকে গত ৯ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণসহ ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন এবং দুর্নীতি, প্রতারণা ও চক্রান্তমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধের জন্য ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও তাদের স্বত্বাধিকারীদের কালো তালিকাভুক্ত করা প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছে দুদক। কমিশনের এ অভিমতের আলোকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ তাদের স্বত্বাধিকারীদের বিরুদ্ধে সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।