করোনার আঘাতে স্থবির অর্থনীতিতে গতি আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী। চর্তুমুখী চাপের মধ্যেও এবারের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। পুরো বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে করোনাকে কেন্দ্র করে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে মেগাপ্ল্যানসহ পৃথক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মানুষের জীবন ও জীবিকা, উভয় কূল রক্ষা করার পাশাপাশি গতানুগতিক বাজেটের ধারা থেকে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের কাঠামো পরিবর্তন করতে হয়েছে। অর্থের সংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও হতে হয়েছে মানবিক। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি লকডাউনে আয়হীন ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে খাওয়ানোর জন্য রাখতে হয়েছে অর্থ। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেড়েছে ব্যয়ের বড় বড় অঙ্ক। ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরও ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশে দুটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী, যাতে ঢালাওভাবে ‘কালো টাকা’ সাদা করার সুযোগ হবে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে যুব ও ক্রীড়া খাতের জন্য এক হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এবারের বাজেট। বাস্তবায়নে আরো গতি আনার পরামর্শ দিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থায় তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। তাঁদের মতে, ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেটা ধরা হয়েছে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের আরেক সন্দেহ বরাদ্দ কাজে লাগানো নিয়ে। বরাদ্দ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে মনোযোগী হওয়ার তাগাদা দিয়েছেন তাঁরা।
মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক নিয়ে সমালোচনা করেছে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো।
মহামারিকালের বাজেটে অসম্ভব আশায় ভর করেছেন অর্থমন্ত্রী। ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতিকে টেনে তুলে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।