কবির আল মাহমুদ, স্পেন থেকে :
করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে ধীরে ধীরে সেই আগের কর্মচাঞ্চল্যে ফিরে যেতে শুরু করেছে স্পেন। দীর্ঘ তিন মাস পর সরকারের দ্বিতীয় ধাপে ঘোষণার পর দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে।
দোকানপাট খোলার পর এবার ৮ জুন থেকে মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য সরকার অনুমতি দিয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে এসব মসজিদে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন। এ দফায় একসঙ্গে ১৫০ মুসল্লি নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন।
মসজিদে অবশ্যই একজন অন্যজন থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়তে হবে। মসজিদগুলোতে নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই স্যানিটাইজিং করে নিজস্ব জায়নামাজ ও মাস্ক ব্যবহার করে প্রবেশ করতে হবে।
বাংলাদেশী মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে এলাহী এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্তত প্রতি ২৫০ বর্গমিটারে একজন করে নামাজ আদায় করতে চেষ্টা করুন। একে অপরের সঙ্গে হাত না মেলানোই ভালো। আপাতত শিশুদের মসজিদে না আনাই উত্তম। সবাই সরকারের নিয়ম মেনে চলুন।
ইতোমধ্যে স্পেনে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ২৫ মে থেকে খুলে দেওয়া হয়। ফলে রাস্তায় এখন অনেক মানুষের চলাচল দেখা যায়। পাবলিক বাসগুলোও আগের তুলনায় অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। করোনা-সংকট উত্তরণে স্পেন সরকার কর্তৃক চার ধাপের দৃতীয় ধাপে চলে আসায় ৮ জুন থেকে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেন। তবে এখনো নিয়ম মেনেই সবকিছু পরিচালনা করতে হচ্ছে সবাইকে।
দেশটির মুসলমানেরা মসজিদের দরজা খুলে দেওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন। অবশেষে সীমিত পরিসরে হলেও এ দেশের মুসলমানদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মসজিদ গুলো।
গত ৩ সপ্তাহ থেকে ক্রমাগত স্পেনের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মৃত্যুর হার কমার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে আক্রান্তের সংখ্যা। আর সে জন্যই দেশটির সরকার বিভিন্ন অঞ্চলভেদে শিথিল করছে জরুরি অবস্থা, যা ভাগ করা হয়েছে চারটি ভিন্ন ধাপে।
স্পেন সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে ৮ জুন সোমবার থেকে দেশটির ৭০ ভাগ অঞ্চল চলে আসবে দ্বিতীয় ধাপে। আর সে কারণেই দেশটির মুসলিম জনগোষ্ঠী সীমিত পরিসরে অনুমতি পেয়েছেন মসজিদে গিয়ে সালাত আদায়ের।
ইতিপূর্বে ৫ জুন শুক্রবার দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ শহর ও পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় বিভিন্ন মসজিদ সরকারের নির্দেশনা মেনে শান্তিপূর্ণ এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধান মেনেই পড়া হয়েছে পবিত্র জুমার নামাজ। মসজিদ কর্তৃপক্ষ আগেই নির্দেশনা দিয়েছিল সবাইকে মাস্ক পরে আসার জন্য, অন্যথায় ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে নিজ নিজ জায়নামাজ নিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল। শহরটির বেশির ভাগ মসজিদে অজুখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সবাইকে বাসা থেকে অজু করে আসার কথা বলা হয় আগেই।
দেশটির বেশির ভাগ মসজিদ মরক্কো, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত। স্পেনে ইতিপূর্বে নামাজ চালু হওয়া এ রকম বেশ কিছু মসজিদে খবর নিয়ে জানা যায়, এখনকার বেশির ভাগ মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়, কোনো কোনো মসজিদে তিন থেকে চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। মূলত স্বল্প পরিসরে মানুষ ভেতরে প্রবেশ করানোর জন্য এ রকম ছোট ছোট করে জামাত আয়োজন করা হয়। একেকটা জামাতে মসজিদভেদে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। বাকিদের বাইরে দাঁড়িয়ে পরবর্তী জামাতের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মসজিদের ভেতরের চিত্রও ছিল সাধারণ দিনের চেয়ে একদম আলাদা, দুজন মুসল্লির মাঝখানে ১ থেকে ২ মিটার দূরত্ব এবং সবাইকে মাস্ক পরে নামাজ পড়তে দেখা যায়।
অবশেষে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদসহ দেশটির ৭০ ভাগ অঞ্চলে ৮ জুন থেকে মসজিদ, চার্চ, গির্জা, মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয় খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।