কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা প্রভাব রুখতে সাধারণ ছুটির মধ্যে বিশেষ অনুমোদন পাওয়া চার প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। যেখানে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। একনেক বৈঠক বন্ধ থাকায় চারটি প্রকল্পই জরুরী বিবেচনায় অনুমোদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার আজ মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হবে।
প্রথমবারের মতো একনেক বৈঠক ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে ১০টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে বলেও জানা গেছে। ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বিশেষ অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পও অনুমোদন পেতে পারে। এদিকে, দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর একনেক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভার্চুয়ালি। এর আগে এনইসি বৈঠকও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণভবন থেকে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে, শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবরাও উপস্থিত থাকবেন। এর আগে, গত ১০ মার্চ সর্বশেষ একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক। ফলে বেশকিছু প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ শেষে হলেও সেগুলো অনুমোদন পায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশেষ অনুমোদন পাওয়া চারটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য অবদান রাখবে। অন্যদিকে দুটি প্রকল্প দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দেবে বিকল্প উপায়ে। ফলে চারটি প্রকল্পই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একনেকে উঠতে যাওয়া প্রকল্প চারটি হলো বিশ্বব্যাংকের ঋণে করোনা মোকাবেলা প্রকল্প, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে করোনা মোকাবেলা প্রকল্প, প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প এবং মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। প্রকল্প চারটির প্রস্তাবিত ব্যয় প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনা সচিব মোঃ নূরুল আমিন বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে ভার্চুয়ালি প্রথমবারের মতো একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় সভা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী গণভবন থেকে সভায় অংশ নেবেন। বাকিরা সবাই এনইসি থেকে সভায় অংশ নেবেন। সভায় ১০টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান সচিব।
পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, একনেক উপস্থাপন হবে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দেয়া সহজ শর্তের ঋণ ৮৫০ কোটি টাকা, বাকি টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের আওতায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করতে নির্বাচিত হাসপাতালে টেস্টিং সুবিধা বাড়ানো, করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় জরুরী প্রয়োজনে এরই মধ্যেই প্রকল্পটির বিশেষ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সী রেসপন্ড এ্যান্ড প্যানডেমিক রেসপন্স’ নামে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে একনেকে। এই প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৮৫০ কোটি টাকা আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে, বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে। এই প্রকল্পও বিশেষ অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট দিয়ে সজ্জিত করা, কমপক্ষে ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা ও গুণগতমানকে কোভিড-১৯ মাইক্রোবায়োালজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে উন্নত করা হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতের কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ জন কর্মীকে আধুনিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই সঙ্গে পিসিআর মেশিন, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, পিপিই ও মাস্ক কেনার কাজে এই প্রকল্পের টাকা খরচ করা হচ্ছে। বাকি দুইটি প্রকল্পের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ‘প্রাথমিক উপবৃত্তি (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটির সংশোধনী বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধে জরুরী বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবারই প্রথম জুতা, জামা ও স্কুল ব্যাগ কিনতে সব শ্রেণীর জন্য এককালীন ১ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (সপ্তম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭৪ হাজার জনবলের বেতন দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির ষষ্ঠ পর্যায়ের মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট ইমাম, খাদেম ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। মানবিক দিক ও গুরুত্ব বিবেচনায় জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে তিন হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জুন ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষাকেন্দ্র, দারুল আরকাম মাদ্রাসা এবং রিসোর্স সেন্টারের কাযর্ক্রম চলমান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই চারটি প্রকল্পই করোনা সঙ্কট হটাতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।