লিবিয়ায় এক মানবপাচারকারীর পরিবারের সদস্যদের গুলিতে ৩০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছেন। কথাটি জানিয়েছে লিবিয়ার জাতিসংঘ স্বীকৃত জাতীয় সম্মতির সরকার তথা জিএনএ বা গভর্ণমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড। পাচারকারী আগেই মারা গেছে। সে মৃত্যুর দায় অভিবাসনেচ্ছু ব্যক্তিদের ওপর চাপিয়েছে তার স্বজনরা। প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। লিবিয়ার সম্মতি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লিবিয়ার মিজদা শহরে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ঘটনায় গুলিতে আহত হয়েছেন ১১ জন। তাঁদের জিনতান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, গুলিতে নিহত ৩০ অভিবাসীর মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি। অন্য চারজন আফ্রিকার। অভিবাসন করতে গিয়ে নানাভাবে মৃত্যুর মুখে পড়েন অভিবাসীরা, অভিবাসনেচ্ছু বাংলাদেশিরা। কিন্তু এমন মৃত্যুর ঘটনা, গুলিতে ২৬ বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি-পরবর্তী গৃহযুদ্ধে লিবিয়া বিপর্যস্ত। দেশটির অর্থনীতি তেলনির্ভর। সেখানে বিশেষত তেলের খনিতে একসময় প্রচুর বাংলাদেশি কাজ করত। ২০১১ সালে গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেখানকার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। তার পরও কাজের সন্ধানে এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ থেকে লোকজন অবৈধ পথে দেশটিতে পাড়ি জমায়, বাংলাদেশিরাও যায়। তাদের বেশির ভাগের লক্ষ্য থাকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়া। সাধারণত ইতালির উপকূলে তারা ভিড়ে। এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি জমানোর পুরো রুটে মানবপাচারকারী চক্র সক্রিয়। এ কথা লিবিয়ার সরকারও জানে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও জানে। কিন্তু লিবীয় সরকারের তেমন কিছু করার নেই। লিবিয়া হয়ে অবৈধ অভিবাসন আগেও হয়েছে, এখনো হয়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) লিবিয়ার মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা তাঁরা দিচ্ছেন।
অবৈধ অভিবাসন সমস্যা বড় এক সমস্যা। নানা পক্ষ ও উপকরণ এতে জড়িত। দরিদ্র দেশগুলোর কর্মসংস্থান সমস্যাই এর মূল কারণ। উন্নত বিশ্বে সস্তা শ্রমের চাহিদাও বড় একটি কারণ। কারণ শ্রমের চাহিদা না থাকলে শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। এই ফোকরেই ঢুকে পড়ে অবৈধ অভিবাসনের প্রসঙ্গটি। তবে ঘটনা যেভাবেই ঘটে থাকুক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দায় আছে তার নাগরিকদের খোঁজ নেওয়ার। রাষ্ট্র যথাবিহিত প্রক্রিয়ায় তার দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা আশা করি।