ভিডিও ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে করোনার বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করতে হবে

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে লড়াইয়ে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমাদের একসঙ্গে এই মহামারী মোকাবেলা করা প্রয়োজন। তবে মহামারীটি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার পরিবর্তনের ওপর কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে।
বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড নেশন্স ইকোনমিক এ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া এ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (ইউএনএসকাপ)- এর ৭৬তম অধিবেশনে ভিডিও বার্তায় প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে তিনটি মৌলিক সমুদ্র ইস্যুও প্রস্তাব করেন তার ভাষণে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য এই প্রথমবারের মতো ইউএনএসক্যাপ’র কোন অধিবেশন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হলো। ৭৬তম অধিবেশনের এবারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল-‘টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগরে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সহযোগিতা জোরদার করা।’ ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশন যেটি এখন ভার্চুয়ালভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তাতেই সেখানে বক্তৃতা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি এই ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে মহামারীটি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার পরিবর্তনের ওপর কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে। আমাদের একসঙ্গে এই মহামারী মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে আমাদের অবশ্যই এসকাপের মাধ্যমে সমুদ্রের কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এগুলো হচ্ছে- প্রথমতঃ ব্লু ইকোনমিতে উন্নত দেশগুলো থেকে জ্ঞান, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সমর্থন বাড়ানো; দ্বিতীয়ত, অবৈধ, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার প্রতিরোধ, প্রতিরোধ ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রচলিত প্লাটফর্ম নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৎস্য উন্নয়নে যৌথ গবেষণা প্রয়োজন। তৃতীয় ও সর্বশেষ, গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় আবাস এবং জীববৈচিত্র সুরক্ষা করা এবং ম্যাপিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচিতি শুরু করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিশ্বের সম্পদের সর্বশেষ ঠিকানা হিসেবে মহাসাগর এবং সাগর আমাদের জীবন-ধারণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। পরিবেশগত দূষণকারীরা সামুদ্রিক খাদ্য-ওয়েবের প্রধান অন্তরায় এবং সমুদ্রগুলোর সম্পদ ব্যবহারের টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সম্পদ দক্ষতার পথে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একীভূত হওয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এই বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে নীল অর্থনীতির (ব্লু-ইকোনমি) প্রবৃদ্ধিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশ সংরক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং মিঠা পানির ও সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি একযোগে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের একসঙ্গে এই মহামারী মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং এসকাপে স্থায়ী প্রতিনিধি মোঃ নাজমুল কওনাইন ইউনেস্কাপের ৭৬তম কমিশনের সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আয়োজক রাষ্ট্র থাইল্যান্ড সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়। এ প্রসঙ্গে ৭৬তম অধিবেশনে প্রদত্ত বক্তব্যে কমিশনের নব-নির্বাচিত সভাপতি নাজমুল কওনাইন বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রেখে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করায় এসকাপের ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
নাজমুল কওনাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কর্মকা- এবং সহযোগিতা এবং ইউএনএসসিএপি’র কার্যক্রমে বাংলাদেশের অত্যন্ত সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অবদানের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা, ফিজির প্রধানমন্ত্রী জসাজা ভোরেক বাইনিমারামা এবং টুভালুর প্রধানমন্ত্রী কৌসিয়া নাটানোও উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিও মেসেজ পাঠান। অধিবেশনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো কোভিড-১৯ মহামারীর আর্থ-সামাজিক প্রভাব মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে এবং একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
অধিবেশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্র বিষয়ক ইউনিটের সচিব মোঃ খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিষয় এবং কমিশনের কাজকর্মে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।