কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন নিয়মে প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন (এসওডি) নিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সেল্ফ চেক-ইন সম্পন্ন করবেন যাত্রী নিজে। এ ধরনের আরও বেশ কিছু নিয়মাবলীর ইঙ্গিত দিয়ে করোনা তা-বের মাঝেও নতুন নিয়মে ফ্লাইট চালানোর বিষয়ে জানালেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান। আগের মতো আর সহজে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে আকাশ চলাচল স্বাভাবিক হবেনা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন- হয়ত খুব শীঘ্রই আকাশ পথ সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। কিন্তু সেটা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় বছর। এমন কি মহামারী শেষ হয়ার পরও এভিয়েশন খাত স্বাভাবিক হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। বর্তমানে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঊর্ধ্বমুখী। এটি কমতে সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২১ সালের শেষের দিকে বা ২০২২ সালে এভিয়েশন খাত পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে। সেজন্য এয়ারলাইন্সগুলোর কিছু এ্যারোনটিক্যাল ও নন-এ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুফের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে নেয়া হয়েছে। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকার তাদের প্রণোদনা দেবে। তবে সরকার সরাসরি প্রণোদনা না দিয়ে বেবিচককে অথরাইজ করবে। তবে সেক্ষেত্রে বেবিচক নিজে রাজস্ব হারাবে। যদি আমরা এয়ারলাইন্সগুলোকে টাকা ছাড় দেই, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সমপরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হবে, আমাদেরও ট্যাক্স-ছাড়সহ নানা সুবিধা দিতে হবে। এ ছাড়াও অন্যান্য সুবিধাও প্রদানের চিন্তা ভাবনা রয়েছে।
গতকাল সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপাতত ৩০ মে পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপর দেশের ও বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে যদি সুযোগ সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি হয়েছে। যদি ফ্লাইট চালু হয় তখন চেক-ইন, ইনফ্লাইট সার্ভিস, ক্রুদের মুভমেন্টসহ নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এছাড়া কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। চেক-ইনের আগে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট হলে তাকে বোর্ডিং পাস বা বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়া হবে না। এছাড়া যাত্রীদের উড়োজাহাজে ওঠার আগে প্যাসেঞ্জার হেলথ কার্ড দেয়া হবে। কার্ডে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর সন্তোষজনক হলেই কেবল তারা ফ্লাই করতে পারবেন।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি বিমানবন্দরে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে উড়োজাহাজকেও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সবাইকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন (এসওডি) নিতে হবে। প্রতিবার জীবাণুমুক্তের পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাইড করবেন, এরপরই ফ্লাইট ছাড়বে। একইভাবে ফ্লাইটে খাবার দেয়ার বিষয়টি একটু নিয়ন্ত্রিত করা হবে। দেড় ঘণ্টার নিচে কোন ফ্লাইটে খাবার পরিবেশন করা যাবে না। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সীমিত আকারে পানি ও জুস থাকবে যা আগে থেকেই একটি ইন্টাক্ট বক্সে রাখতে হবে। দেড় ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটের যাত্রীদের শুকনা খাবার দিতে হবে যা প্লেনে ওঠার আগেই সরবরাহ করতে হবে। ফ্লাইটের সময় যদি চার ঘণ্টার বেশি হয় তবে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখতে হবে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে। কারও তাপমাত্রা যদি ৯৯.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তবে ক্রুরা আগে থেকেই ডেসটিনেশন এয়ারপোর্টকে জানাবেন- যাতে উড়োজাহাজ ল্যান্ড করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- বর্তমানে বেবিচকের বার্ষিক রাজস্ব প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার বেশি। টাকাগুলো আবার উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হয়। যদি ডমেস্টিক ফ্লাইটে ছয় মাসের জন্য ৫০% চার্জ মওকুফ করা হয় তবে আমরা ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাব। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য ৫০% চার্জ মওকুফ করা হলে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হবে। বেবিচকেরও নিজস্ব খরচ চালাতে হয়। আমাদেরও টাকার প্রয়োজন। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা বিবেচনাধীন রয়েছে।