কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের আজ ২৪তম দিবস। আমরা অতিবাহিত করছি নাজাতের দশক। আমাদের রোজার হক হকুম নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, জানতে হবে এ মাসে সিয়াম সাধনার বিধিবিধান। গোটা রমজান মাস রোজা রাখা ফরজ। রমজান যেমন রহমতের বারিধারায় সিক্ত তেমনি কোন ব্যক্তি বা কোন সমাজে এ মাসের মর্যাদাহানি হলে বা এ মাসের যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহার না হলে হাদিস শরীফ মতে আল্লাহ তাঁর মহান ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) ও মহানবী হুজুরে কারীম (স)-এর অভিশাপ বর্ষিত হয়। তাই পারতপক্ষে কোন মুসলমানের রোজা ভাঙ্গা উচিত নয়। এরপরেও কেউ যদি কতিপয় যৌক্তিক কারণে রোজা ভঙ্গ করে ইসলামী আইনের কিতাবগুলোতে তার প্রতিবিধান দেয়া হয়েছে। যেমন রমজান মাসে রোজা রাখার পর কেউ বিনা ওজরে, ইচ্ছাকৃতভাবে তা ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়। রোজার কাফ্ফারা জিহারের কাফ্ফারার মতোই। কাফ্ফারা হলো একটি গোলাম আযাদ করা। সম্ভব না হলে একাধারে ষাট দিন রোজা রাখা। তাও সম্ভব না হলে ষাটজন মিসকিনকে দু’বেলা আহার করানো।
গোলাম আযাদ করতে অক্ষম হলে একাধারে ষাটদিন রোজা রাখতে হবে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে কিছু কিছু করে রোজা রাখা জায়িজ নেই। যদি ঘটনাক্রমে মাঝে দুই একদিন বাদ পড়ে যায় তবে পুনরায় আরম্ভ করে ষাটটি পূর্ণ আদায় করতে হবে। তবে এ ষাট দিনের মধ্যে যদি কোন মহিলার নির্দিষ্ট স্ত্রীরোগ আরম্ভ হয়ে যায় তবে পূর্বের রোজাগুলোও হিসাবে ধরা হবে (শামী-২য় খণ্ড)। নিফাসের কারণে যদি রোজা ভঙ্গ করতে হয় তবে পূর্বের রোজাসমূহ ধর্তব্য হবে না। নতুনভাবে পুনরায় ষাটটি রোজা রাখতে হবে (শামী)।
রোগের কারণে যদি কাফ্ফারার রোজা ভঙ্গ করতে হয় সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় ষাটটি রোজা রাখতে হবে। যদি মাঝে রমজান মাস এসে যায় তবে রমজান মাসের পর কাফ্ফারার রোজা আদায় হবে না। নতুনভাবে আবার ষাটটি রোজা রাখতে হবে (শামী)। শরীয়ত এ কঠিন সিদ্ধান্ত দিয়েছে এজন্য যে, কোন ব্যক্তি যেন রমজান মাসে কোরান নাজিলের এ মৌসুমে সিয়াম সাধনাকে উপেক্ষা করে নিজে কোন গোটা সমাজের বিরোধিতায় নিমগ্ন হওয়ার সাহস না পায়। এজন্য আমাদের দেশে একটি কথা আছে, ‘সময়ের একফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। এ সঙ্গে ইসলাম ধর্ম থেকে এ কথাটিও উপলব্ধিযোগ্য, ওয়াক্তের কাজ ওয়াক্তের মধ্যে করতে হবে। এ দর্শন দুনিয়াবী যেকোন কাজে আমরা যদি অনুসরণ করি, তাহলে অবশ্যই সফলতা অনিবার্য।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত মাসয়ালার সঙ্গে এ বিষয়টিও জেনে রাখা দরকার, বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে কেউ যদি কাফ্ফারার রোজা রাখতে সক্ষম না হয় তবে এর পরিবর্তে ষাটজন মিসকিনকে পেটভরে দু’বেলা আহার করাতে হবে। এই ষাটজন মিসকিনের প্রত্যেককেই বালেগ হতে হবে। কোন নাবালেগকে কাফ্ফারার খাদ্য খাওয়ানো হলে তা হিসাবে গণ্য হবে না। এর পরিবর্তে সমসংখ্যক বালেগ মিসকিনকে খাওয়াতে হবে (শামী)। খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেক মিসকিনকে ‘সাদাকাতুল ফিত্র’ পরিমাণ চাল, আটা বা এর মূল্য প্রদান করলেও কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে (শামী)।
যার ওপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়েছে সে যদি অন্য কাউকে তার পক্ষ হতে কাফ্ফারা আদায় করার জন্য আদেশ করে এবং উক্ত ব্যক্তি তা আদায় করে দেয় তবে কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যার ওপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়েছে তার বিনা অনুমতিতে অন্য কেউ যদি তার পক্ষ থেকে কাফ্ফারা আদায় করে তবে কাফ্ফারা আদায় হবে না (শামী, ২য় খণ্ড)।
একজন মিসকিনকে ষাটদিন পর্যন্ত দু’বেলা আহার করালে অথবা ষাটদিন পর্যন্ত একজন মিসকিনকে ষাটবার সাদকায়ে ফিতরের সমপরিমাণ গম বা এর মূল্য প্রদান করলে এতেও কাফ্ফারা আদায় হয়ে যাবে (হিদায়া)। একাধারে ষাটদিন আহার না করিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আহার করালেও কাফ্ফারা আদায় হবে (মারাকিল ফালাহ)।