কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঈদের আগে গণপরিবহন চালুর কোন সম্ভাবনা নেই। পরিবহন চলাচল ও মানুষের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। তাই নৌ-সড়ক রেলপথ থেকে শুরু করে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে ৩০ মে পর্যন্ত। এরমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে যানবাহন চালুর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। শুক্রবার দেশে করোনায় রেকর্ড এক হাজার ২০২ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। এই নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২০ হাজার ৬৫টিতে। আর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩০০।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতালি, জার্মানি, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশের মতো লকডাউন শিথিল করতে গিয়ে সর্বোচ্চ আক্রান্তের দেশগুলোর পথে হাঁটতে চলেছে বাংলাদেশ। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফের কঠোর হওয়ার চিন্তা সরকারের। ঈদের ছুটিতে গণপরিবহন বন্ধের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যান চলাচলেও কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোতে রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা রেখে মানুষকে ঘরে রাখার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শই হলো করোনা নির্মূল করতে হলে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। তাছাড়া যত পরীক্ষা তত সুরক্ষা।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঈদকে সামনে রেখে সীমিত পর্যায়ে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত সপ্তাহে। এ নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বেশ কয়েকদফা দেন দরবারও হয়েছিল। কিন্তু ১০ মে থেকে দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট খুলে দেয়ায় দেদার বাড়ছে করোনার রোগী। রাস্তায় বেড়েছে যান, নেমেছে মানুষের সড়ক, মহাসড়ক থেকে শুরু করে ফেরিঘাটে ঢাকামুখি বাড়ে মানুষের ভিড়। ফলে বেড়েছে মৃত্যুর ঢল। এই পরিস্থিতিতে পরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়ে কঠোর হওয়ার পথে হাঁটা ছাড়া সরকারের সামনে বিকল্প কিছু নেই। তেমনি মানুষের অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চায় সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যে কোন সময় রাজধানী ঢাকাতেও ফের মার্কেট বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে।
সরকারী বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মানুষের অবাধ চলাচল ঠেকান ও কোনভাবেই সাধারণ মানুষ যাতে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচল করতে না পারে সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে গণপরিবহন চালু করার বিষয়ে পরিবহন মালিকরা আবেদন করলেও সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ঈদের আগের চারদিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দুদিন- এই সাতদিন সব ধরনের যানবাহন চলাচলে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। এই সাতদিন প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করতে দেয়া হবে না। যে যেখানে অবস্থান করছেন, এবার সেখানেই তাকে ঈদ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারী আদেশে বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এবার সাধারণ মানুষের অবাধ চলাচল নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে মহাসড়কে মালবাহী ও জরুরী সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, সাধারণ ছুটি এবং চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলা বা এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা নেয়া, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করা, ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। সাধারণ ছুটি/নিষেধাজ্ঞাকালে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। মহাসড়কে মালবাহী/জরুরী সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আপাতত ঈদের আগে লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে নৌযান মালিকরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঈদের আগে নৌযান চালাবেন না। তবে অনুমতি পেলে বাস মালিকরা তাদের বাস চালাতে রাজি থাকলেও এখন বলছেন, যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণপরিবহন চলবে না, তারাও সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে এ সময় গণপরিবহন চালাবেন না। এমনটি জানিয়েছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, যেহেতু আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাধারণ ছুটিকালীন জনসাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সেহেতু গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পরিবহন না করতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে লকডাউন চলছে। চলছে সাধারণ ছুটি। এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলা এবং এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সেহেতু বাস চালানোর অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়াও সরকারী আদেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়েছে।